এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিস্কুট শিল্প

সবার রুচি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে গত প্রায় দুই দশকে বাংলাদেশে বিস্কুট ও বেকারি পণ্যের বাজার অনেকটাই সম্প্রসারিত হয়েছে। ঘরের কাছের সাধারণ মুদির দোকানে বা অলিগলির চায়ের টং দোকানে পাঁচ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ছোট বিস্কুটের প্যাকেট। যেখানে থাকছে কয়েকটি বিস্কুট। সাধারণ মানুষের তাৎক্ষনিক চাহিদা মেটাতে বেশ কাজ দিচ্ছে দেশে তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত বিস্কুট।

বিভিন্ন সুপারশপে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে, অভিজাত বিপণিতে পাওয়া যায় উন্নত মানের বিস্কুটের প্যাকেট। এগুলোও দেশেই তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির বিস্কুট। যেগুলো বিদেশি যে কোনো বিস্কুটের চেয়ে স্বাদে-মানে কোনো অংশে কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিস্কুট শিল্প অভাবনীয় অগ্রগতি চোখে পড়ছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী যেখানে টিকে থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত, সেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে বিস্কুট শিল্পে। করোনা মহামারির মধ্যেই ২০১৯-২০ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বিস্কুট রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বরে বিস্কুট রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে রপ্তানি হয় ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার এবং ২০২০ সালের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ ডলারের বিস্কুট। যদিও করোনা মহামারির প্রভাবে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরে অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯২৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশংকায় সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে রেস্তোরাঁ কিংবা রাস্তার খোলা খাবার দোকানে যাওয়া অনেকটাই কমে গেছে। আজকাল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ খাবার হিসেবে প্যাকেটজাত বিস্কুটের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। কম মূল্যে বিকল্প হিসেবে বিস্কুটকে নির্ভরযোগ্য মনে করছেন সবাই।

করোনাকালীন লকডাউনের সময় প্রস্তুতি হিসেবে বিস্কুটকে নির্ভরযোগ্য মনে করছেন সবাই। করোনাকালীন লকডাউনের সময় প্রস্তুতি হিসেবে মানুষ ঘরে ঘরে শুকনো খাবার মজুত করেছিল। ফলে তখন বিস্কুটের চাহিদা বেড়ে যায়। এই অবস্থা পৃথিবীর প্রায় দেশে লক্ষ করা গেছে। সংক্রমণের ভয়ে রেস্তোরাঁর খাবারে মানুষের অনীহার কারণে বাংলাদেশের বিস্কুট প্রস্তুকারক, রপ্তানিকারক কোম্পোনিগুলো মহামারির সময় বিশ্ব বাজারে বেশ ভালো একটি জায়গা দখল করতে পেরেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টন বিস্কুট উত্পাদন করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ওমান, কাতার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত বাংলাদেশে তৈরি বিস্কুটের ক্রেতা। সরকার রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় তা বিদেশের বাজারে বিক্রি বাড়াতে অবদান রাখছে আলাদাভাবে। দেশের বিস্কুট শিল্প বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই শিল্পের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকায়। জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যমান চাহিদার কারণে করোনা মহামারির সময়ের মধ্যেও বাংলাদেশের বিস্কুট প্রস্তুকারক কোম্পানিগুলো গত বছরের এপ্রিলে মাত্র অল্প কয়েক দিন ছাড়া পুরো সময় ধরে চালু ছিল।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.