আমার কাহিনীর শুরুটা ৭০ এর দশকে। একদম অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা এক বঙ্গসন্তান চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ মাতৃকার টানে পরিবারের আশার প্রদীপ সেই যুবক এক মহান আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণায় যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
সেদিনকার সেই যুবক- জনাব আবুল খায়ের, নাঙ্গলকোটের বক্সগন্জ ইউনিয়নের বড়কালী গ্রামের কৃতিসন্তান, পরবর্তীতে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সফল একজন অভিভাবক।
জনাব আবুল খায়ের যুদ্ধ পরবর্তীতে দেশ পুনর্গঠনে শ্রম প্রদান করেন। সত্তর এবং আশির দশকে অনেকেই প্রাচুর্যের টানে বিদেশ গ্রমণ করেন; কিন্তু এই মুক্তিযোদ্ধা সকল প্রলোভনকে জয় করে নিজ পরিবার, সমাজ তথা দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন।
সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে কর্মরত থাকবার কারণে জনাব আবুল খায়ের অনেক বৈধ বা অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার জীবনে প্রাপ্ত সকল সুযোগ- সুবিধা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন।
জনাব আবুল খায়ের নাঙ্গলকোটে তথা বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং ফেনী জেলা অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে।
দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হবার ‘অপরাধে’ জনাব আবুল খায়ের তার প্রাপ্য প্রমোশন পান নাই। কিন্তু তারপরও তার চেতনা-আদর্শ থেকে একচুল স্খলিত হন নাই, কোনো চাটুকারিতার আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই।
সেই মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান আমি ডাঃ সোবহান অনীক, করোনা কালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করার সুযোগ পাই। করোনার এই দূর্যোগ মুহূর্তে নাঙ্গলকোটে অবস্থানরত একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আমি আমার সর্ব্শক্তি নিয়োগ করে নাঙ্গলকোটবাসির চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার প্রয়াস পাই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আসি বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এই করোনা যুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করি।
সবশেষে বলতে চাই, বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশের যেকোনো দূর্যোগের মূহূর্তে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে অবশ্যই আত্মপ্রকাশ করবেন। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের যথাযথ মূল্যায়ণ করা হোক- এটাই আমাদের কামনা।