‘এই সরকারের অধীনে মানুষ কোনো নির্বাচন চায় না’
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন বা সরকারের অধীনে মানুষ কোনো নির্বাচন চায় না। এ কারণে ইসির সংলাপ বা ইভিএম নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। কারণ আমরা বিশ্বাস করি না যে, এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, নিরপেক্ষ সরকার যদি না আসে, এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের দায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন নেবে না, তারা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে’ সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনারা যতই কথা বলুক লাভ নেই। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার। এটাই মূল প্রশ্ন। পুরো জায়গাটা ওখানে। সরকার যদি ওরা থাকে এবং শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তাহলে কোনো মতেই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা আমরা দেখেছি গতবার, তার আগে দেখেছি।’
রবিবার (১৭ জুলাই) সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপ শুরুর পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ তো আলোচনা করার সুযোগই রাখে নাই। তারা তো সরকারে। ড্রাইভিং সিটে স্টিয়ারিং তাদের হাতে। পুরোটাই তাকেই (প্রধানমন্ত্রী) করতে হবে। দেশে যখন এই বিষয়ে একটা রাজনৈতিক বড় সংকট আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগই বলছে যে, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চাই না, আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।’
সরকার ন্যূনতম কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোনো মিটিং এমনকি মিলাদ পড়তে গেলেও পুলিশ দিয়ে বাধা দিচ্ছে। পুলিশ গতকালও মুন্সিগঞ্জে আমাদের দোয়া মাহফিল করতে দেয়নি। এই সমস্ত ভণ্ডামির মানে হয় না। এটা তো হিপোক্রেসি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সাম্প্রদায়িকতা কোনো মতেই এদেশে কাম্য না এবং এগুলো কখনোই কোনো ভালো বিষয় নিয়ে আসে না এবং এটা অন্যায়।একইসঙ্গে সবাইকে অনুরোধ করবো যে, এমন কোনো কথা না বলা বা স্ট্যাটাস না দেওয়া, যাতে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, এটা সম্পূর্ণ সরকারের ব্যর্থতা। এই সরকারের আমলে দেশে সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িকতা তৈরি হয়েছে।’
সর্বত্র দুর্নীতি
শ্রীলংকার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চরিত্রগত একটা ব্যাপার আছে। সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখন চরম দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে যায়। আজকে গোটা দেশের চিত্র যেটা দেখছেন, শুধু দুর্নীতি। দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যে জায়গা থেকে ফিরে আসার উপায় নেই।’
দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিস্থিতির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির মিল আছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘এটা বললে তারা অসন্তুষ্ট হয়। তারা চিৎকার করে বলতে থাকে না। কিন্তু কাদের সাহের কিছুদিন আগে বলেছেন, শঙ্কা আছে। এখানে একজন খুব ভালো কথা বলেছেন, শঙ্কা না, এটা ঘটবে যদি শিক্ষা না নেওয়া হয়।’
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত তিনি খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আধুনিক বিশ্বের এটা হচ্ছে একটা নিয়মিত রুটিন ব্যাপার, সৌজন্যবোধ। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলি, শুধু বিএনপি না, আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলি। এটা তো আজকের নয়, বহুদিন ধরে এটা হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পারঙ্গম। তারা জাতিসংঘ থেকে মিথ্যা চিঠিও আনিয়েছিল। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, আমরা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বিষয় নিয়ে কথা বলি। তার বাইরে তো আমরা কথা বলি না।’
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেড খান, রিয়াজউদ্দীন নসু, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।