উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বে উদাহরণ বাংলাদেশ: জয়
উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ।
দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (মে ২৫) জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভার দ্বিতীয় দিনে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন এবং বহুমাত্রিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো’ শীর্ষক এক থিমেটিক আলোচনায় এ কথা তুলে ধরেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত দূরদর্শী পদক্ষেপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’- এর সাফল্য তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে এক চমৎকার উদাহরণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি শুধু ভারত বা পাকিস্তানকেই নয়, চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, কোভিড-১৯ এর মধ্যেও আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে অতিক্রম করেছি; ২০২০ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২২২৭ মার্কিন ডলারে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির লকডাউন সময়ে বাংলাদেশ দ্রুতই অনলাইন সরকার ব্যবস্থাপনা, অনলাইন শিক্ষা ও অনলাইন কর্মপরিবেশে নিজেদের পরিবর্তিত করতে পেরেছে। দেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক কোভিড শনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং সরাসরি কোভিড তথ্য-সহায়তা চালু করার ফলে সবচেয়ে কম সংক্রমণ হারের দেশের তালিকাতে বাংলাদেশ অবস্থান করছে।
একযুগ পূর্বের উদাহরণ টেনে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সে সময় বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ০.৩ ভাগ। আজ ১২ বছর পরে দেশের ১১৬ মিলিয়ন মানুষ সুলভ ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে যা দেশের জনসংখ্যার ৭০ভাগ।
এই খাতে সাফল্যের পেছনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ কাজ করেছে মর্মে উল্লেখ করেন তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, সরকার তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণে বিগত কয়েক বছরে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব-ভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল সারাদেশে স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৯০ভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে; আমরা ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ স্থাপন করেছে মর্মে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে দেশের দুর্গম এলাকাসমূহ ও দীপাঞ্চল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনায় নারীসহ ব্যাপক উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যাপক তথ্য-ব্যাংক সৃষ্টি, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা পরিশোধ, ই-সরকার, ই-নথি, ই-জুডিশিয়ারি, টেলি ও অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা, সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা, জাতীয় হটলাইন স্থাপনসহ বাংলাদেশে নাগরিক জীবনধারার প্রতিটি স্তরে তথ্য-প্রযুক্তি সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে মর্মে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সরকার আইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব স্কুলেই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সরকার দুই মিলিয়নেরও বেশি নাগরিককে বিভিন্ন ধরনের আইট প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর এভাবেই তথ্য-প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, ও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটালি পশ্চাদপদ একটি দেশ থেকে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা সরকার একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব উপায়ে ও স্বল্প খরচে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জ্ঞান ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতি ও সেবা সৃষ্টি করতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে আমরা আমাদের সেবা ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তাদের সহায়তা করতে সদা প্রস্তুত রয়েছি।
ইভেন্টটিতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেলও কী-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন। প্যানেল আলোচনা পর্বে জাতিসংঘ সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির সদস্য এবং শিক্ষাবিদরা অংশ নেন। আলোচনা পর্বে অংশ নেন সদস্য বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের জনগণের সহজলভ্য প্রবেশাধিকারসহ এ খাতে দেশের সামগ্রিক অর্জন ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য আইসিটি উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে ইন্টারনেট সংযোগ, ই-গভর্ণনেন্স, ই-বিজিনেজ এর ব্যাপক প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের কথা প্রদত্ত বক্তব্য তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
জাতিসংঘ পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভা গত ২৪ মে শুরু হয়েছে যা আগামী ২৮ মে শেষ হবে। পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভা যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রে।
উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম সম্মেলন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।