ঈদযাত্রার প্রস্তুতি: সাজছে গণপরিবহন, শৃঙ্খলায় জোর

আর কদিন পরেই ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে মানুষ। সেই স্বপ্নযাত্রাকে পরিপূর্ণ করতে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। এরই মধ্যে নতুন করে সাজছে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন। তবে যাত্রীচাপ সামাল দিতে দৌরাত্ম্য বাড়ে ফিটনেসবিহীন গাড়িরও। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নির্বিঘ্নে বাড়িফেরা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রী হয়রানি বন্ধ ও মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পরিবহন নেতাদের।

ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা যায়, নতুন রূপে রাস্তায় নামতে তৈরি হচ্ছে নতুন বাস। চলছে মেরামত। রঙিন আবহে সাজছে মহাসড়কের যাত্রীবাহী গাড়ি। নতুন বাসের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন সিট।

বাস মেরামত শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘আমরা পুরাতন বাসগুলোকে রং ও মেরামত করে ডেলিভারি দেই। এছাড়া নতুন বাসও থাকে।’

আরেকজন বলেন, ‘নতুন কাজ একটু কম হয়। পুরাতন বাসের কাজই এখানে বেশি হয়।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, এবার ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের প্রায় ৭৫ শতাংশই ফিরবেন সড়কপথে। এতে বেড়ে যায় গণপরিবহনের চাহিদা। তবে নতুন গাড়ি তৈরি বা পুরোনো গাড়ি মেরামত হলেও ঈদে চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন সংকট যেন নতুন নয়।

আর এই সংকটকে পুঁজি করে বেশকিছু সুযোগসন্ধানী ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করে। পথে পথে সৃষ্টি হয় দুর্ভোগ, যানজট। ঘটে দুর্ঘটনাও। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গেল বছর ঈদে প্রায় ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩৬৭ জন। আহত হয়েছে অন্তত দেড় হাজার মানুষ। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৯.২০ শতাংশ বেশি।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মহাসড়কে স্বস্তি ফেরাতে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষ আছে। তাদের দেখা উচিত মহাসড়কে কী ধরনের গাড়ি নামছে। শুধু রং করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো হচ্ছে কিনা।

স্বস্তিদায়ক যাত্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সমন্বিত উদ্যোগে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস এই খাতের সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির এম এ বাতেন বলেন, ‘সিটি সার্ভিসের প্রতিটা গাড়ির কোম্পানিকে নিয়ে মিটিং করেছি যেন এই সব গাড়ি লং রুটে না চলে। সাধারণত এসব গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে হালকা যানবাহন চালানোর। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো কোনো অবস্থাতেই সিটি সার্ভিসের গাড়ি লং রুটে না চলতে পারে।’

ঈদে বাড়ি ফিরতে প্রতিবছরই যাত্রীদের গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া। সঙ্গে দৌরাত্ম্য বাড়ে টিকিট কালোবাজারি ও ফিটনেসবিহীন গণপরিবহনের। তবে এ বছর এসব বন্ধের উদ্যোগের কথা বলছেন পরিবহন নেতারা।

শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, বাড়তি ভাড়া, মলম পার্টি, ছিনতাই এইগুলোর সঙ্গে ব্যক্তি বিশেষ জড়িত থাকে। কোনো ব্যক্তির অন্যায়কে মারা গোটা কমিউনিটির বদনাম হতে দিবো না।

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে লোকাল বাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সব ধরনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা নিতে হবে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তবেই আনন্দযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে।

এদিকে, জননিরাপত্তা বিভাগের সুপারিশে ঈদের আগে ৭টি মহাসড়কের সংস্কার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সড়কগুলোতে সৃষ্ট খানাখন্দ এবং অন্য সমস্যা সমাধানের জন্য মেরামত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হবে। বিশেষভাবে কাঁচন ব্রিজ থেকে ভুলতা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে।

ঈদযাত্রার সময় নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। পুলিশ ছাড়াও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনাল যেমন গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও সায়দাবাদ এলাকায় নজরদারি চালাবে। এছাড়া, ঈদের আগে সড়ক ও পরিবহন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা থেকে প্রায় ৭৭৫টি বাস এবং অন্য অঞ্চলে ৪৭০টি বাস চলাচল করবে ঈদ স্পেশালের জন্য। বিআরটিসি ইতিমধ্যে ১২৪৫টি বাস প্রস্তুত করেছে যেগুলো বিশেষভাবে ঈদযাত্রার জন্য চালানো হবে। ঈদযাত্রার আগেই এসব বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হবে।

ঈদ উপলক্ষে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে একটি সুপারিশ করা হয়েছে, যা ২৫-২৮ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য বিশেষ বাস ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, গার্মেন্টস কর্মীরা ঈদের আগেই তাদের বেতন-বোনাস পেয়ে যাবেন বলে বিজিএমইএ জানিয়েছে। এর ফলে, কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে না।

গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে সিসিটিভি ক্যামেরা ও লাইট সিস্টেম বসানোর প্রস্তুতি চলছে, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

এছাড়া, ঈদের আগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিআরটিসি জানিয়েছে, নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.