সত্য মুক্তি দেয়; মিথ্যা ধ্বংস করে। সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যও সত্যবাদিতার বিকল্প নেই। সত্য ও সত্যবাদিতার জন্য ইসলাম পুরস্কারের কথা বলেছে। তবে মুনাফেক ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার মতো ভয়াবহ অপরাধ করে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘মুনাফিকুন’ নামে একটি সুরা রয়েছে। এ ছাড়াও আল কোরআনের বিভিন্ন বর্ণনায় মুনাফেকির বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত ১৩টি আয়াতে মুনাফেকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরও ৩৮টি আয়াতে মুনাফেকদের আলোচনা করেছেন।
মুনাফেকরা দু’মুখো স্বভাবের। তাদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যখন তারা মুমিনদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ইমান এনেছি। আবার যখন নিরিবিলি তাদের শয়তানদের (কাফের নেতারা) সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি।’ মুনাফেকরা শুধু মৌখিকভাবে ইমানের স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু অন্তরে মোটেও বিশ্বাস লালন করে না। পবিত্র কোরআনের সুরা আল বাকারার ৮ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে- ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে- আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ইমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়।’
মুনাফেকদের বিশ্বাসে সন্দেহ, অস্বীকৃতি ও মিথ্যা থাকার কারণে তাদের অন্তরকে অসুস্থ কলব বলা হয়। অসুস্থতা হলো সুস্থতার বিপরীত। দ্বিমুখী আচরণ একটি কঠিন ব্যাধি। আর খাঁটি বিশ্বাস হলো সুস্থতা। ইমান আনার পর যারা দ্বিমুখী আচরণ করে, তারা মূলত অসুস্থ। সুরা বাকারার ১০ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে- ‘তাদের অন্তঃকরণে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের মিথ্যাচারের দরুন; তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ মুনাফেকরা ইসলাম ও সামাজিক শান্তির বিরোধিতা করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। কিন্তু তারা নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে তা অনুভব করতে পারছে না। সুরা বাকারার ১২ নম্বর আয়াতে তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে- ‘সাবধান! এরাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তাদের সে অনুভূতি নেই।’
মুনাফেকরা নিজেদের বুদ্ধিমান, ধূর্ত ও চতুর মনে করে। আর মুমিন, মুত্তাকি ও নেককারদের নির্বোধ ও বোকা বলে মনে করে। অথচ আল্লাহর কাছে তারাই বোকা ও নির্বোধ। সুরা বাকারার ১৩ নম্বর আয়াতে মুনাফেকদের সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে- ‘যখন তাদের বলা হয়, অন্য লোকদের মতো তোমরাও ইমান আনো; তখন তারা বলে, আমরা কি সেই নির্বোধ লোকদের মতো ইমান আনব? আসলে তারাই তো নির্বোধ, কিন্তু তাদের সে জ্ঞান নেই।’
মুনাফেকদের পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবার ৭৩ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন, ‘হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করুন। আর তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।’ সুরা আন নিসার ১৪৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফেকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করবে।’
সুরা মুনাফিকুনের ৬৮ নম্বর আয়াতে মুনাফেকদের পরিণাম সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারী এবং কাফেরদের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আজাব।’
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলে পাক (সা.)-এর যুগে মুনাফেক ছিল; আজকের দিনেও আছে, আর সেটা হলো- ইমানের পরে কুফরি করা অর্থাৎ ইমান প্রকাশ করে আল্লাহর দ্বীনের বিরোধী কাজ করা। (বুখারি)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে যাবতীয় নেফাকি থেকে বিরত থেকে সত্যবাদিতার ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। সত্যবাদিতা সৎকর্মের দিকে ধাবিত করে। নবী করিম (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘তোমরা সদা সত্য কথা বলবে, নিশ্চয়ই সত্য সৎকর্মের দিকে পরিচালিত করে এবং সৎকর্ম বেহেশতের দিকে পথ প্রদর্শন করে। আর নিশ্চয়ই মানুষ যখন সদা সত্য কথা বলতে থাকে ও সত্যের সন্ধানে লিপ্ত থাকে, অবশেষে আল্লাহর দরবারে সে পরম সত্যবাদী বলে লিখিত হয়ে থাকে।’
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা