ইসরায়েলি ৩ জিম্মি মুক্ত, ছাড়া পেলেন ৩৬৯ ফিলিস্তিনি
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আরও তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। শনিবার(১৫ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে তাঁদের ইসরায়েলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের দুই কারাগার থেকে ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়ার আগে আজ গাজার খান ইউনিস শহরে একটি মঞ্চের দিকে তাঁদের নিয়ে যেতে দেখা যায় হামাস যোদ্ধাদের। সেখানে জমায়েত হওয়া লোকজনের উদ্দেশে তিনজনকে ভাষণ দিতে বলা হয়। তাঁরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বাকি জিম্মি ও বন্দী বিনিময় শেষ করার আহ্বান জানান। এরপর তাঁদের রেডক্রসের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে মুক্তি পাওয়া তিন জিম্মির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সাগুই দেকেল চেন, সাশা ত্রুপানভ ও ইয়াইর হর্ন। তাঁদের ফেরত পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি বাহিনীও। জিম্মিদের স্বাগত জানাতে তেল আবিবে জড়ো হন লোকজন। এ সময় তাঁদের হাতে ‘যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি শেষ করুন’ লেখা পোস্টার ছিল।
এর কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েল পরিচালিত কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের বহনকারী একটি বাস দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় প্রবেশ করে। এ সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তাঁদের স্বাগত জানান সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনিরা। এ ছাড়া নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত ইসরায়েলের একটি কারাগার থেকে কয়েকটি বাসে করে ফিলিস্তিনি বন্দীরা গাজায় পৌঁছান।
দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর পর থেকে ছয়বার ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময় হয়েছে। আজ তিনজনসহ এ পর্যন্ত মোট ১৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা হামাসের।
শনিবার জিম্মি মুক্তি নিয়ে অবশ্য বড় শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে জিম্মি মুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছিল হামাস। পাল্টা জবাবে ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, এমনটি হলে গাজায় আবার হামলা শুরু করবে তারা। পরে গতকাল শুক্রবার দুই পক্ষই জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনি বন্দীদের বহনকারী একটি বাস গাজায় প্রবেশের পর তাদের স্বাগত জানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে তিন ধাপে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ চলবে ৪২ দিন। শুক্রবার হামাসের একজন কর্মকর্তা জানান, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে। এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল একটি সূত্রও একই তথ্য জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ইসরায়েলে যাওয়ার কথা।
এদিকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ এবং উপত্যকাটির বাসিন্দাদের বিতাড়িত করা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এ নিয়ে আলোচনা করতে আগামী বৃহস্পতিবার রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন মিসর, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নেতারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত উপত্যকাটিতে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি।