ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন এর অর্থ কি?
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) সুন্দর অর্থবোধক একটি কালাম। এটি মুসলমানের মৃত্যুসংবাদসহ সকল বিপদ-মসিবতে পাঠ করা যায়। এমনকি জিকির হিসেবেও সবসময় পাঠ করা যায়। বাক্যটি মূলত আল্লাহর যেকোনো সিদ্ধান্তে সবর ও সন্তুষ্টি প্রকাশের মাধ্যম এবং বান্দার বান্দাসুলভ আচরণের উপযুক্ত পরিভাষা।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের। বিপদ আসলে যারা বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব)। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রবের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭)
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বাক্যের দুই অংশ। প্রথম অংশ হচ্ছে ‘ইন্নালিল্লাহ’ অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর’। আর পরের অংশটি হচ্ছে ‘ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থ: ‘আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে।’ সুতরাং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন অর্থ হচ্ছে- ‘আমরা আল্লাহর এবং আল্লাহর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬)
মূলত বাক্যটি পাঠ করার মাধ্যমে ঈমানের এই ঘোষণা দেওয়া হয় যে, আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন, সকল সৃষ্টির নিরঙ্কুশ মালিক তিনিই। চিরকাল আমরা এ পৃথিবীতে থাকতে পারব না। একদিন সব শেষ হয়ে যাবে, অতঃপর তার কাছেই সবাইকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
এই বাক্য পাঠকারীরা কোরআন অনুযায়ী ধৈর্যশীল মুমিন এবং মহান প্রভুর প্রতি আস্থাশীল। এই বাক্য পাঠে রয়েছে বিপুল সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কারো ওপর কোনো বিপদ এলে অবশ্যই সে যেন বলে- ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা ইনদাকাহ তাসাবতু মুসিবাতি, ফা’জুরনি ফিহা ওয়াআবদিলনি মিনহা খাইরা।’ অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ তাআলার এবং আমাদের অবশ্যই তার দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি আমার বিপদের প্রতিদান চাই। অতএব তুমি আমাকে এর প্রতিদান দাও এবং এর বিনিময়ে ভালো কিছু দান করো।’ (তিরমিজি: ৩৫১১)
এভাবে বিপদে ধৈর্যশীল বান্দা হিসেবে ইন্নালিল্লাহ.. পাঠ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তার কাছে এর উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়। তাছাড়া কারো মৃত্যুর খবর শুনে ইন্নালিল্লাহ পড়ার মাধ্যমে মুমিন নিজেকে মনে করিয়ে দেয় যে, এভাবে একদিন আমাকেও চলে যেতে হবে। এটি নিজের জন্য অনেক বড় একটি উপদেশ। তাই আমাদের উচিত, ছোট-বড় বিপদে বিচলিত না হয়ে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা।
এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন এবং হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদে মসিবতে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করার এবং ধৈর্যশীল মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments are closed.