আসছে না নতুন নোট, টাকার বাজার চড়া

এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে আসছে না টাকার নতুন নোট। তাই মতিঝিল ও গুলিস্তানের নতুন টাকার বাজার চড়া। ২, ৫, ১০, ২০ টাকাসহ সব ধরনের নতুন নোট কিনলে আগের চেয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্তে এমন প্রভাব পড়েছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) মতিঝিল ও গুলিস্তানের নতুন টাকার অস্থায়ী দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বান্ডিলে গতবারের ঈদের মৌসুমের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদাই বেশি।

ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছরই নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। এ সময় নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন টাকাও সংগ্রহ করেন অনেকে।

এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় সোমবার (১০ মার্চ) স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় বাধে আপত্তি।

ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নোটের চাহিদা বাড়ে। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন নোট ও ছেঁড়া টাকার বেচাকেনার অস্থায়ী দোকান আছে। মূলত ফুটপাতেই এ ব্যবসা বেশি চলে।

মঙ্গলবার সকালে মতিঝিল ও গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একের পর এক ক্রেতাও আসছেন। তবে চড়া দাম শুনে দরদাম না করেই অনেকে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় নতুন নোটের দাম প্রতি বান্ডিলে ১০০ থেকে ২০০ থেকে টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে আসবে না—এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই এই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা মূলত ছেঁড়া ও পুরোনো টাকার ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রির জন্য ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হাঁকছেন। এক বান্ডিলে ১০০টি নোট থাকে এবং এর মূল্যমান ১ হাজার টাকা। দর-কষাকষি করে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে একেকটি বান্ডিল ক্রেতারা কিনছেন। গত বছর পবিত্র রোজার সময় এমন এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ নতুন নোটের বান্ডিলপ্রতি ক্রেতাদের বাড়তি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যা গত বছর পবিত্র রোজার সময় ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার এক বান্ডিলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ৪৫০ টাকার কমবেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলায় কথা হলো বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল আমিনের সঙ্গে। চার বছর পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে এসেছেন। সেখানে না পেয়ে তিনি বাংলাদেশে ব্যাংকের গেটের পাশে বসা ভ্রাম্যমাণ নতুন নোটের দোকানে আসেন। তিনি চান ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের বান্ডিল। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন বাচ্চাদের সালামি দেওয়ার জন্য নতুন নোট কিনতে এসেছি। প্রায় প্রতিবছরই নতুন নোট সংগ্রহ করি। কিন্তু এবার আগের বছরের চেয়ে দাম অনেক বেশি।’

গুলিস্তানের নতুন নোটের অস্থায়ী দোকান। ছবি: সংগৃহীত

মতিঝিলের অস্থায়ী দোকানে ২ টাকার ১০ বান্ডিল (২ হাজার টাকা) নতুন নোটের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ৫ টাকার এক বান্ডিল (৫০০ টাকার মূল্যমান) বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা বাড়তি দামে। আর ১০ ২০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি হওয়ায় এসব নোটের বান্ডিলপ্রতি বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটের সামনে ২০ বছর ধরে নতুন ও পুরোনো নোটের কারবার করেন শাহিন আহমেদ। তিনি জানান, তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নতুন নোট কেনেন। ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এবার নতুন নোট দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এবার নতুন নোট বাজারে আসবে না—এমন খবরে সকাল থেকে তারাও দাম বাড়িয়েছেন। দিন শেষে এই বাড়তি দামের বোঝা চেপে বসছে ক্রেতাদের ওপর।

গুলিস্তানের আরেক ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন বলেন, এক মাস ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন নোট বাজারে না আসায় ১০ ও ২০ টাকার বান্ডিলপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ঈদের আগে দাম আরও বাড়বে—এমন আশঙ্কা তাঁর।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকেরা নতুন নোট বেশি কেনেন। তবে ঈদ ঘনিয়ে এলে এই তালিকায় গ্রামে ফেরা ও শ্রমজীবী ক্রেতার সংখ্যা বেশ বাড়বে।

মতিঝিলের নতুন নোটের অস্থায়ী দোকান। ছবি: সংগৃহীত

কেন বাড়ল: সোমবার বিভিন্ন ব্যাংককে চিঠি দিয়ে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন নোট পাওয়া যাবে ১৯ মার্চ থেকে। এবার ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট দেওয়া হবে। নতুন নোট বিনিময় হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ও কয়েকটি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত জনসাধারণ ও গ্রাহকদের মধ্যে নতুন নোট বিনিময়ের পরিকল্পনা ছিল। এরই মধ্যে নতুন নোট বিতরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে। টাকার নকশা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নোটের নকশায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.