আশ্রয় দেওয়া নারীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে খুন হন উপাধ্যক্ষ সাইফুর!

রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় রুপা ও নাজেম নামে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।

পুলিশ বলছে, রুপাকে বাসায় আশ্রয় দেওয়ার পর তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান। যা দেখে ফেলে তাকে কুপিয়ে খুন করেন স্বামী নাজেম।

বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান উত্তরা বিভাগের ডিসি মুহিদুল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার রুপা ও নাজেম দম্পতিকে সহযোগিতার কথা বলে উত্তরখানের সেই বাসায় নেওয়া হয়েছিল রোজার আগের দিন। সেই বাসায় থাকাকালীন রুপার শরীরে বিভিন্ন সময়ে হাত দিতেন উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান। ঘটনার রাতে রুপাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। আর সেই দৃশ্য পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্বামী দেখে ফেলেন। এসময় স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণ দেখে সহ্য করতে পারেননি নাজেম। এক পর্যায়ে রান্নাঘর থেকে বটি এনে সাইফুলের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপ দেন। এতে গুরুতর আহত হয়ে সাইফুর রহমানের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় ফরিদপুর থেকে রুপা-নাজেম দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত: ডিসি মুহিদুল বলেন, মোবাইলে পরিচয়ের সূত্রে ছয়-সাত মাস আগে বিয়ে করেন রুপা ও নাজেম। নাজেমের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা এলাকায়। আর রুপার বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলায়। তারা মূলত রংপুর থেকে লালমনি এক্সপ্রেসে ঢাকায় আসেন এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নামেন। এরপর ফরিদপুর যেতে চেয়েছিলেন। তারা অপেক্ষা করছিলেন স্টেশনের আট নম্বর প্লাটফর্মে। নাজেম এক পর্যায়ে তার স্ত্রীকে বলেন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি তুমি ওয়েট কর। এরই মাঝে রুপা ঘুমিয়ে পড়ায় ব্যাগ থেকে মালামাল হারিয়ে যায়। পরে ঘুম ভাঙলে উঠে দেখে তার ব্যাগ ও পার্স হারিয়ে গেছে। এ সময় রুপা পাশে থাকা এক মহিলাকে ডাকলে সেই পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া সাইফুর রহমান কাছে গিয়ে বলেন তুমি কি আমাকে ডেকেছো! এসময় রুপা বলে না আমি আপনাকে ডাকিনি। তখন সাইফুর রহমান বলেন তোমার কী হয়েছে? আর তোমার সাথে কেউ আছে কি না। রুপা জানায় তার স্বামী সঙ্গে আছে। সে নাস্তা আনতে গেছে। ওই সময় আরও কথা হয় তাদের মাঝে। এরই মধ্যে নাজেম আসেন। নাজেমকে জিজ্ঞেস করেন তোমরা কী করো? নাজেম জানায় তারা তেমন কিছু করে না। একথা শুনে সাইফুর রহমান তাকে বলে তোমরা আমার সঙ্গে চলো। আমার ছয় তলা বাড়ি আছে, গাড়ি আছে। তোমরা আমার বাসায় থাকবে। ড্রাইভারি শিখে তুমি আমার গাড়ি চালাবে এবং আমার বাসাতেই তোমরা থাকবে। এই কথা বলে তাদের একটি রিকশায় তুলে পরে বাসে এবং অটোতে করে সেই বাসায় নিয়ে যান সাইফুর রহমান।

ঘটনার বিবরণে ডিসি জানান, যখন সে বাসাতে গিয়ে সাইফুর রহমান ঘরের তালা খুলছিলেন সে সময় রুপা তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি তো বলেছেন আপনার স্ত্রী সন্তান আছে। তাহলে তারা কোথায়। তখন তিনি বলেন তারা পাশের বাসায় বেড়াতে গেছে । ৫/৬ দিন থাকবে এরপর চলে আসবে। এসব হচ্ছে রোজার আগের দিনের ঘটনা। পরের দিন রোজা শুরু হবে।

গ্রেপ্তার রুপা জিজ্ঞাসাবাদে যা জানিয়েছেন: রুপার দাবি, সেই বাসায় থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে সাইফুর রহমান তার শ্লীলতাহানি করেছেন। তাকে নানাভাবে যৌন নির্যাতন করতেন। সাইফুর রহমান যখন বাসার বাইরে যেতেন তখন ঘরের প্রধান দরজা বন্ধ করে দিয়ে যেতেন। তিনি রুপাকে বলতেন তুমি বারান্দায় যাবে না। তুমি যদি এসব কথা তোমার স্বামীকে বলো তবে তাকে মেরে ফেলব।

রুপার ভাষ্য, তিনি তার স্বামীকে অনেক ভালোবাসেন। তাই স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে তিনি এসব কিছুই তাকে বলেননি।

সেদিন রাতে যা ঘটেছিল: উত্তরা বিভাগের ডিসি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গ্রেপ্তার  নাজেম ও রুপার বরাতে বলেন, বাসাটিতে অন্য রুমে তেমন খাট-পালং না থাকায় তারা এক রুমে ঘুমাতেন শুরুর দিন থেকে। মাঝে ঘুমাতেন নাজিম। গত ৯ মার্চ রাতে তারা এক সঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন। ঘুমের মাঝে সাইফুর রহমান তার স্বামীর গায়ের ওপরদিয়ে রুপার গায়ে হাত দিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান উঠে গিয়ে রুপাকে জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তাদের মাঝে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রুপার স্বামী নাজেমের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে ওঠে নাজেম উপাধ্যক্ষকে বলতে থাকেন তুমি তাকে ছেড়ে দাও না হলে আমি তোমাকে মেরে ফেলব। তখন নাজেম পাশে থাকা রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে আসেন। ওই সময়ও সাইফুর রহমান রুপার গায়ের ওপরেই ছিলেন। ওই অবস্থায় নাজিম তার মাথায় কোপ দেন। সাইফুর রহমান তা ঠেকানোর চেষ্টা করলে তার হাতের অনেক জায়গায় কোপ দেন নাজেম। এক পর্যায় সাইফুর রহমান নিজেকে রক্ষার জন্য দৌড় দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়েন। এরপর তারা বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে একটা পার্স, ব্যাগ ও চাবির গোছা নিয়ে তারা চলে যান। তারপর সাইফুর রহমান প্লাস্টিকের দরজা ভেঙে বের হন। পরে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে হাসপাতালে নেয়ার আধা ঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়।

রুপার ওপর নির্যাতন চলছিল জেনেও তারা কেন বাসা ছাড়বেন না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি মুহিদুল বলেন, তাদেরকে বাসা থেকে বের হতে দিতেন না উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান।

রুপাকে ফোর্স করে বলতো সেখানেই থাকতে হবে। না হলে তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। ফলে ভয়ে কাউকে কিছু বলতো না রুপা। রুপা ও নাজেম খুব বেশি শিক্ষিত তাও নয়। তাদের বয়সও ২০-২২ এর মধ্যে৷ তাদের কাছে মোবাইলও ছিল না।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.