আরো ৩১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন
২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে অঙ্গীকার ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়নের। নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই কাঙ্খিত লক্ষ্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ। এরই মধ্যে দেশের ৯৭.৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দেশের ১৮ জেলার ৩১টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দুটি পাওয়ার প্লান্ট, ১১টি গ্রিড সাব-স্টেশন, ছয়টি নতুন সঞ্চালন লাইনও উদ্বোধন করেছেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে এগুলো উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাঁর মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন। মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ২৭টি জেলার জনপ্রতিনিধিরাও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২৫৭টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। এই ৩১টি উপজেলা উদ্বোধনের পর মোট ২৮৮টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এলো। এর ফলে দেশের ৯৭.৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। শুধু বাতি জ্বেলে বসে থাকা নয়। বিদ্যুৎ থাকলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আমরা এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্রাহক বাড়িয়েছি।’
সব জায়গায় যাতে বিদ্যুৎ পৌঁছায় সেজন্য সৌরবিদ্যুতের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা সব ঘরে আলো জ্বালব।’
২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও যাতে বিদ্যুৎ পায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ যা হয় তার চেয়ে কম দামে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। তাই গ্রাহকদের বলব, অপচয় করবেন না। বিলটাও কম আসবে। এটি আমার বিশেষ অনুরোধ।’
মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকার ভর্তুকিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায়, গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ পেতাম না। জেনারেটর চালিয়ে বাতি জ্বালতে হতো। আমরা এমন কোনো বৈষম্য করিনি। যে কারণে বগুড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র।’
প্রধানমন্ত্রী যে দুটি পাওয়ার প্লান্ট উদ্বোধন করলেন সেগুলো হলো কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া-১ লিমিটেডের ১১০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট এবং নোয়াখালীর এইচ এফ পাওয়ার লিমিটেডের ১১৩ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহাস্থানগড় ১৩২/৩৩ কেভি, রাজশাহী (উত্তর) ১৩২/৩ কেভি, চৌদ্দগ্রাম ১৩২/৩৩ কেভি, ভালুকা ১৩২/৩ কেভি, বেনাপোল ১৩২/৩৩ কেভি ও শেরপুর ১৩২/৩৩ কেভি সাবস্টেশন উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি, তিনি ৪০০.২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শ্যামপুর ২৩০/১৩২ কেভি সাবস্টেশন, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রিড সাবস্টেশন এবং সঞ্চালন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় শেরপুর ১৩২/৩৩ ও কুড়িগ্রাম ১৩২/৩৩ এবং গ্রিড সাবস্টেশন কনস্ট্রাকশন প্রকল্পের রাজেন্দ্রপুর ১৩২/৩৩ জিআইএস প্রকল্পের আওতায় রাজেন্দ্রপুর ১৩২-৩৩ সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে ছয়টি সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, যশোর-বেনাপোল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, শরীয়তপুর-মাদারীপুর ১৩২ সঞ্চালন লাইন, তিসত্মা-কুড়িগ্রাম ১৩২ সঞ্চালন লাইন, মাগুরা-মাগুরা নড়াইল ১৩২ সঞ্চালন লাইন এবং পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ সঞ্চালন লাইন।
শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, সরাইল, আশুগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া, কুমিল্লা জেলার বরুড়া ও মুরাদগঞ্জ, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা ও বোয়ালমারী, গাইবান্ধা জেলার সাদুলস্নাপুর এবং ঝিনাইদাহ জেলার সদর উপজেলা। মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর, দৌলতপুর, সিঙ্গাইর, ও শিবালয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, নওগাঁ জেলার মান্দা, ধামরহাট, সাপাহার, নীলফামারি জেলার ডোমার, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ, রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর ও বালিয়াকান্দি, রাজশাহী জেলার বাঘমারা, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ এবং মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা।