
আমাদের কাজ করতে দেন, আক্রমণ করবেন না: দেশবাসীর প্রতি আইজিপি
পুলিশের ওপর আক্রমণ না করতে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাজ করতে দেন, অনুগ্রহ করে আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না। আমরা এই সমাজের, আমরা এই দেশেরই নাগরিক। কীভাবে সমাজে স্থিরতা আসবে, যদি আমরা কাজ না করতে পারি। আমরা কাজ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে কীভাবে আগাব।’
গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস মোগরখাল এলাকায় শিল্প পুলিশ-২–এর কার্যালয়ে বিশেষ কল্যাণ সভায় বৃহস্পতিবার(১৩ মার্চ) প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্প পুলিশের আইজি ছিবাগত উল্লাহ। শিল্প পুলিশ সদর দপ্তর আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান, শিল্প পুলিশের ডিআইজি ইসরাইল হাওলাদার, গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
শিল্প কারখানার শ্রমিকদের কোনো প্রকার গুজবে কান দিতে নিষেধ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, গুজব ছড়িয়ে কারখানা ভাঙচুর কার্যক্রমে অংশ নিয়ে যারা এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোভাবেই রাস্তা অবরোধ করার মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কাজকর্ম করা যাবে না।
বাহারুল আলম জানান, শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন–ভাতা ও ঈদ বোনাস ২০ মার্চের মধ্যে দেওয়ার পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ঈদের ছুটিতে শ্রমজীবী মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারেন, সে জন্য শিল্প, জেলা ও মহানগর পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকদের রাস্তা না আটকানো এবং জনগণের উৎসব আয়োজনে বিঘ্ন হয়ে না দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আইজিপি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে আমাদের কিছু সিনিয়র অফিসার, মোস্টলি সিনিয়ার অফিসার অতি উৎসাহ দেখিয়েছেন। আমি আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিছু বুঝি না। কিন্তু ওনাদের রাজনৈতিক আনুগত্যের জন্য পুরো পুলিশ কলঙ্কিত হয়েছে। সারা বিশ্বে এখন বলে যে বাংলাদেশ পুলিশ এত নির্মম কীভাবে হলো? আমিও তো পুলিশ। এই দায়ভারটা আমার ওপরও পড়ে। আমি অবসরে থাকলেও সেই দায়ভারটা আসে। আমার আত্মীয়স্বজন বলেন, “তোমরা কী করো? তোমরা এগুলি কী করছ?” আমাদের যা করার কথা ছিল, আমরা তার কিছুই করি নাই। আমরা মানুষের বিরুদ্ধে গেছি। এটা কিছু লোকের উচ্চ বিলাস, কিছু লোকের অন্ধ এবং অন্যায় আনুগত্যের জন্য এটা হয়েছে।’
আইজিপি বাহারুল আলম আরও বলেন, ‘পুলিশ কাজ করতে যাচ্ছে, আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। সেখানে আক্রমণের শিকার হচ্ছে; আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ যখন বলছে, “আপনি উল্টো দিক দিয়ে আসবেন না, আপনি আইন মেনে চলেন।’ সেখানে ট্রাফিক পুলিশের ওপরও চড়াও হচ্ছে। আইন না মানার একটা প্রবণতা চলে আসছে কেন? তারা মনে করছে, পুলিশ জনবিরোধী কাজ করেছে, এখন আমরা আমাদের মতো চলব। পুলিশ লাগবে না, এটা পুরো রং। একটা সভ্য দেশ পুলিশ ছাড়া চলতে পারে না। দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, দেশের অপরাধ দমন যদি না করা হয়, শৃঙ্খলা যদি ফিরে না আসে, তাহলে কোনো নাগরিক শান্তিতে থাকতে পারবে না।’