আমদানি খরচের তুলনায় তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলাচ!
বাজারে আমদানি খরচের তুলনায় তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রান্নায় অত্যাবশ্যকীয় মসলা এলাচ। চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি ১০ টন এলাচের চালান খালাস করে। প্রতিষ্ঠানটি আমদানির মূল্য দেখিয়েছে প্রতি কেজি সাড়ে সাত ডলার।
সব ধরনের আমদানি খরচ, শুল্ক ও শিপিং চার্জ যোগ করলে এর দাম প্রতি কেজি এক হাজার ৪৫০ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পাইকারি বাজারে এলাচ বিক্রি করেছে প্রতি কেজি চার হাজার ২০০ টাকায়, যা খুচরায় পৌঁছায় সাড়ে চার হাজার টাকায়।
যদিও এলাচ একটি অত্যাবশ্যকীয় মসলা, তবে এর ওপর ৫৯ শতাংশ উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এ শুল্ক এড়াতে আমদানিকারকরা আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে প্রকৃত খরচ ১৫-২০ ডলার হলেও কাগজে দেখানো হচ্ছে সাত থেকে সাড়ে সাত ডলার।
এ প্রসঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, এলাচের প্রকৃত আমদানিব্যয় কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ ডলার। তবে শুল্ক ফাঁকি দিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে সাত থেকে সাড়ে সাত ডলার দেখানো হয় এবং বাকি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।
তারা জানান, এলাচ আমদানিতে প্রায় ৫৯ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, যা প্রতি কেজিতে প্রায় ৫৪০ টাকা। প্রকৃত মূল্য দেখালে শুল্ক দিতে হতো এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা।
আমদানিকারকরা দাবি করেছেন, এলাচকে বিলাসবহুল পণ্য না ধরে প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত এবং শুল্ক হার কমিয়ে ২০-৩০ শতাংশ করা হলে আন্ডার-ইনভয়েসিং কমবে।
কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না ভোক্তারা: রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা এলাচের দামে তার প্রভাব পড়ছে না। ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না।
রিয়াজউদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমদানিকারকরা কোনো কারণ ছাড়াই এলাচের দাম কেজিতে ২০০ টাকা বাড়িয়েছে।’
এদিকে, এলাচ আমদানিতে আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের প্রমাণ মিললেও শুল্ক কর্মকর্তারা এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
তাদের মতে, আমদানি চালান, ব্যাংকিং রেকর্ড, প্যাকেজিং লিস্ট, চালানের কপি ও শিপিং কাগজপত্র যাচাই করা ছাড়া আন্ডার বা ওভার-ইনভয়েসিং নিশ্চিত করা কঠিন।
শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় বাজারে বিক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে পণ্য আমদানির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মোহাম্মদ কাওসার আলম পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা আমদানিকারকদের প্রকৃত খরচের চেয়ে কম মূল্য দেখানোর বিষয়ে অবগত আছি। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা পাইকারি ও খুচরা বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তবে এখনো রিপোর্ট জমা দেয়নি।’
তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, বাজার সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে এলাচ প্রতি কেজি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উন্নতমানের এলাচের দাম আরও বেশি।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ট্যাডলিংডটকমের তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এলাচের দাম প্রতি কেজি ১৫-১৮ ডলার, ভারতে ১৪-১৮ ডলার এবং মালয়েশিয়াতেও একই।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে (২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি) এস্পেসিয়া ইন্টারন্যাশনালসহ অন্তত ২১টি প্রতিষ্ঠান ৬০০ টন এলাচ আমদানি করেছে, যার মূল্য ১২০ কোটি টাকা।
কাস্টমস ও ব্যাংকিং রেকর্ড বলছে, ঘোষিত আমদানি মূল্য ছিল প্রতি কেজি ছয় দশমিক সাত থেকে সাড়ে সাত ডলার।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টন এলাচের চাহিদা রয়েছে।