আবার প্রথম! সাদিয়া খালিদ বার্লিনাল ট্যালেন্টস এ প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র সমালোচক।
সাদিয়া খালিদ রীতি, বাংলাদেশী চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র সমালোচক। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশ-বিদেশের পত্রিকাগুলোতে ‘কানের ফিপরেস্কিতে রীতিই বাংলাদেশ’ শিরোনামের সংবাদে আলোচনার ঝড় তুলেন।
ফ্রান্সের কান (বিশ্বের সবচেয়ে বড়) চলচ্চিত্র উৎসবের ৭২তম আসরে ফিপরেস্কি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড এর জুরি বোর্ডের সদস্য হয়ে তাক লাগিয়ে দেন সাদিয়া খালিদ। ফ্রান্স, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম আর ইসরায়েল এর বিচারকদের পাশের চেয়ারে বসে সম্মানিত করেন বাংলাদেশকে। কানে নির্বাচিত ছবিগুলো দেখে সেরা নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল রীতিসহ তাদের কাঁধে। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম ফিপরেস্কির বিচারক হয়েছেন।
উল্লেখ্য ২০০২ সালের কান উৎসবে ফিপরেস্কি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল বাংলাদেশের (সড়ক দূর্গঘটনায় নিহত) চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। আর এটিকেই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করা হয়।
ফিপরেস্কিতে বিচারক হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে সেসময় গণমাধ্যমের কাছে সেটাকে ‘ব্যক্তি অর্জন’ না বলে ‘জাতীয় অর্জন’ বলে অভিহিত করেছিলেন সাদিয়া খালিদ।
নতুন বছরে বাংলাদেশকে আরও একবার ‘জাতীয় অর্জন’ এর আনন্দে ভাসালেন সাদিয়া। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্যোগ বার্লিনাল ট্যালেন্টস এর ১৮তম আসরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রকর্মীদের সাথে থাকছেন বাংলাদেশের মেয়ে সাদিয়া-ও! শুধু কি তাই! বার্লিনাল ট্যালেন্টস এর ওয়েবসাইটে স্থান পেয়েছে সাদিয়ার ছবি এবং আগ্রহের বিভিন্ন বিষয়াদি।
জানা গেছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে শুরু হবে বার্লিন উৎসবের ৭০তম আসর যা চলবে পহেলা মার্চ পর্যন্ত। এর অংশ হিসেবে ২২ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বার্লিনাল ট্যালেন্টস কার্যক্রম, যাতে অংশ নেবেন বিশ্বের ৮৬টি দেশের ২৫৫ জন চলচ্চিত্রকর্মী। ১২৬ জন নারীর মধ্যে সাদিয়া খালিদ রীতি একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে থাকবেন সেখানে। সাদিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়া থেকে মাত্র ১৪ জন থাকছেন বার্লিনাল ট্যালেন্টস এ। এ বছরের মূল থিম হলো ‘কালেক্টিভস’।
২০০৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে বাংলাদেশের হয়ে এ পর্যন্ত অংশ নেবার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১২ জন। তবে ‘চলচ্চিত্র সমালোচনা’ বিভাগে রীতি-ই প্রথম বাংলাদেশী। চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে অংশ নেয়ার জন্য চলচ্চিত্র রিভিউ, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা-এই তিনটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর এর কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে সাদিয়া খালিদ বলেন, “খুব ভালো লাগছে। এ অর্জন শুধু আমার একার নয়, বাংলাদেশের সব চলচ্চিত্র সমালোচকদের অর্জন। আশা করছি জার্মানি থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা দেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নে কাজে লাগবে।“
এদিকে গেলো ডিসেম্বরেই সাদিয়া খালিদ ভারতের ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব কেরালা’তে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কান আর কেরালার আগে তিনি আরও চারটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক ছিলেন। সেগুলো হলো- ইতালির ‘রিলিজিয়ন টুডে ফেস্টিভ্যাল’, ভারতের ‘শিলিগুড়ি শর্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফেস্টিভ্যাল’, নেপালের ‘হিউম্যান রাইটস ফেস্টিভ্যাল’ এবং বাংলাদেশের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।’
সাদিয়া খালিদ কাজ করেছেন ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় চিত্রনাট্য বিষয়ে পড়তে যান। সেখানে তিনি কাজ করেছেন ডেইলি ব্রুইন (বিনোদন সাংবাদিক), এএমবিআই মিডিয়া (স্ক্রিপ্ট এনালিস্ট) গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানে। সাদিয়া জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটনের মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে কাজ করছেন ইংরেজি দৈনিক ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ এ।
চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে বহু লেখা রয়েছে রীতির। এছাড়াও ইউল্যাব, পাঠশালা, শিল্পকলা একাডেমী এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ফিল্ম বিষয়ে পড়ান তিনি।