‘আপেল বরই’ চাষে বিপ্লব, বাজারমূল্য দেড়শ কোটি

সাতক্ষীরায় ৮৪১ হেক্টর জমিতে বরই চাষের লক্ষ্য

দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাতক্ষীরায় ‘আপেল বরই’ চাষ। চলতি মৌসুমে ৮৪১ হেক্টর জমিতে বরই চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর কুল চাষিরা দেড়শ কোটি টাকার বেশি বাজারমূল্য পেতে পারেন।

সাতক্ষীরার বেলে-দোআঁশ মাটি ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বরই চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কলারোয়া উপজেলায় (৪৭০ হেক্টর)। কলারোয়ায় ৪৭০ হেক্টর, তালায় ১৬৫ হেক্টর, সদরে ১১২ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৪৫ হেক্টর, শ্যামনগরে ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ২০ হেক্টর, দেবহাটায় ৪ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হচ্ছে।

জানা গেছে, সাতক্ষীর বরই দেশীয় বাজারে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিরও বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বরই রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব, যা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভৈরব নগর জামে মসজিদের ইমাম ও উদ্যোক্তা মো. আল মামুন বলেন, আমার মসজিদের সামনে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে বরই বিক্রি করছি। এটি আমার পার্ট-টাইম কাজ। সাতক্ষীরার বরই সারা দেশে বিখ্যাত, বিশেষ করে মিঠাবাড়ির বরই। এখানে নারিকেল বরই, টক বরই, থাই আপেল বরইসহ বিভিন্ন জাতের বরই পাওয়া যায়। বাজারে দাম ১৪০-১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠছে।

ফরিদপুরের বাসিন্দা মো. মুরাদ মল্লিক বলেন, আমি সাতক্ষীরায় একটি প্রোগ্রামে এসে ফেরার পথে বরই বিক্রি হতে দেখে কিছু কিনলাম। দেখতে সুন্দর আর শুনেছি সাতক্ষীরার বরইয়ের স্বাদ অনেক ভালো। এখানে প্রচুর বরই বাগানও দেখলাম।

সাতক্ষীরা নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি এলাকার বরই চাষি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস বলেন, আমি বহুদিন ধরে বরই চাষ করছি। এ বছর চার বিঘা জমিতে চাষ করে এ পর্যন্ত ৩-৪ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। আমার বাগানে নাইকেল বরই, থাই আপেল বরই, বল সুন্দরী, টক বরইসহ বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে নাইকেল বরইয়ের দাম সবচেয়ে বেশি, ১৮০-২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘায় ১০০ মণ বরই উৎপাদন হয় এবং খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকা লাভ থাকে। এ বছরও একই রকম লাভের আশা করছি।


আশাশুনির একটি বাগানে গাছে ঝুলছে বরই। ছবি: সংগৃহীত

মিঠাবাড়ি এলাকার আরেক বরই চাষি মো. সোহাগ হোসেন বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে বরই চাষ করেছি, আশা করছি ১০০ বরই কুল পাব। ৫০ মণ বিক্রি হয়ে গেছে। এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। আমার বাগানে বিভিন্ন ধরনের বরই রয়েছে, এর মধ্যে নারিকেল বরইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং দামও বেশি, যা স্থানীয়ভাবে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি এবং ঢাকায় ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বরই চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষিরা দেড়শ কোটি টাকার বেশি বাজার মূল্য পাবেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.