সামাজিক নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নই তাদের কাজ। অথচ বরাবরই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, বিগত ৩টি জাতীয় নির্বাচনেই ভোট কারচুপিতে সহায়তা করেছে এই বাহিনী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচারে গুলি ও গণঅভ্যুত্থান শেষে প্রতিবিপ্লবের অভিযোগের তীরও রয়েছে এই বাহিনীর দিকে।
পুলিশের সহায়ক বাহিনী হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করছে আনসার সদস্য বিক্রম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তার পাশাপাশি শৃঙ্খলাও তাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে প্রতিটা ওয়ার্ডে যেখানে রোগীরা থাকে সেখানে নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। বাহিরের পার্কিংয়ের শৃঙ্খলা দিয়ে থাকি।’
আর কি কি কাজ করেন তারা?
একজন আনসার সদস্য বলেন, ‘রোগীরা আসলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকি।’
হাসপাতাল ও রোগীর নিরাপত্তার ভার তাদের উপর হলেও সুযোগ সুবিধা কেমন? নতুন বাংলাদেশে চাওয়া পাওয়াই বা কতটুকু পূরণ হলো?
আরেকজন বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছিল তাদের মধ্যে ডিউটিকে কিছু লোক ফিরে আসছে আর কিছু লোকের কাজ স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনীর ইতিহাসের শুরু ১৯৪৮ সাল থেকে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সব জায়গায় ছিল আনসারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অথচ শেষ ১৫ বছরে এই ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ভোট কেন্দ্রে কারচুপিতে সহায়তা থেকে শুরু করে আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে এই বাহিনী।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে সহায়তা করার অভিযোগ ছিল এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। এছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল হচ্ছে দেখেও নিশ্চুপ থাকারও অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। সব থেকে বড় অভিযোগ ছাত্র-জনতার আন্দোলন থামাতে গুলি নিক্ষেপ।
অভিযোগ রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করেছে এই বাহিনী। চাকরি জাতীয় করণের দাবিতে জড়িয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে। ছাত্র জনতার প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তারা। অভিযোগ ওঠে গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে আনসার বাহিনীর প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা।
দাবি ওঠে এতো এতো অপরাধে জড়িত এই বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর । পরিবর্তন হয় আনসার প্রধান। এর পর পার হয়েছে ৩ মাসের বেশি সময়। কতটুকু ঢেলে সাজানো গেলো আনসারকে?
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ‘বিভ্রান্তির জালে আমাদের আনসার সদস্যকে আর কেউ জড়াতে পারবে না। কারণ তারা জানে তাদের মিশন কি, তাদের ভূমিকা কি, তাদের কার্যক্ষমতা কি তা আগের থেকে বেশি সচেতন।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫২৬৩ টি ভোট কেন্দ্রে আনসার মোতায়েন করা হয়েছিলো ৪ লাখ ২৩ হাজার ১৫৬ জন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ হাজার ১২৩ টি ভোট কেন্দ্রের জন্য আনসার নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৭৬ জন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩ ভোট কেন্দ্রের জন্য আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো ৪ লাখ ৮২ হাজার ১৯৬ জন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ১৪৯ টি ভোট কেন্দ্রের জন্য আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন।
গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন করে নির্বাচনমুখী যাত্রা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। কতটুকু ঢেলে সাজানো হয়েছে এই বাহিনীকে ?
মহাপরিচালক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আনসার সদস্যরা ভালোভাবে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে আমাদের ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’
বাহিনীটিকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নির্বাচনী ব্যবস্থায় নিয়োগের আগে খোঁজ নেওয়ার কথা বলছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আনসার সদস্যরা সুর মিলিয়ে সামনের নির্বাচনে কারা আসতেছে তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই মিশে যাওয়ার বিষয়টা সবসময় ভয়ের জায়গা তৈরি করে।’
আনসারের কাজের পরিধি বুঝতে পারলে শৃঙ্খলার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা ও দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে এই বাহিনী সহায়তা করতে পারবে বলে ধারণা বাহিনী সংশ্লিষ্টদের।