আখিরাতে মানুষ হত্যাকারীর যে ভয়াবহ পরিণতির কথা হাদিসে এসেছে

 

মানুষকে হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ। এর জন্য শুধু দুনিয়াতেই নয়, পরকালেও আছে ভয়ংকর শাস্তি। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে, সে যেন তামাম (সব) মানুষকেই হত্যা করল। আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচাল।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অমান্য করে, নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্যে যারা ন্যায়-নীতি শিক্ষা দেয় তাদের হত্যা করে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। এরাই তারা যাদের সমুদয় আমল দুনিয়া ও আখিরাতে নিষ্ফল হবে এবং তাদের কোনো সাহায্যকারী নেই। (সুরা ইমরান, আয়াত: ২১-২২)

এ ক্ষেত্রে কিয়ামতের দিন মানুষের হক সম্পর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে সবার আগে বিচার হবে মানুষ হত্যার। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৮৯)। আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হত্যাকারী ওয়ারিছ হবে না। (সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ২১১২)

 

আবার জঘন্য এ অপরাধে দুনিয়াতে যেমন আইন অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারিত হয়, তেমনি পরকালেও হত্যাকারীর জন্য ভয়ংকর শাস্তি রয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম। যাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে, তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত। আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৩)

এ ক্ষেত্রে অনেকে মিলেও যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তবে তাদের সবার জন্যই পরকালে জাহান্নাম অবধারিত রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আসমান-জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সকলে একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মুমিনকে মেরে ফেলার কাজে শরিক থাকে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাদের সবাইকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ১৩৯৮)

এ জন্য মিনার দিনগুলোয় নবীজি (সা.) হত্যার মতো কুফরির কাজ থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, একবার নবীজি (সা.) কুরবানির দিন লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। এ সময় তিনি (নবীজি) বললেন- হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন দিন? জবাবে সবাই বললেন, সম্মানিত দিন। তারপর নবীজি আবারও বললেন- এ শহরটি কোন শহর? সবাই বললেন, সম্মানিত শহর। এরপর আবারও নবীজি বললেন- এ মাসটি কোন মাস? জবাবে সবাই বললেন- সম্মানিত মাস।

পরে নবীজি বললেন- তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইজ্জত-হুরমত তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত, যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি, তোমাদের এ শহর এবং তোমাদের এ মাস। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে নবীজি (সা.) বললেন- ইয়া আল্লাহ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌঁছিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছিয়েছি? ইবনু আব্বস (রা.) বলেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই নবীজির এ কথাগুলো ছিল উম্মতের জন্য অসিয়ত। পরে নবীজি (সা.) বলেন- উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে (পয়গাম) পৌঁছে দেয়- আমার পরে তোমরা কুফরির দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৩০)

You might also like

Comments are closed.