আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কম টিকা গ্রহণকারীদের

সিভাসুর গবেষণা

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) এক গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত হলেও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম। আক্রান্তদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়নি। টিকা নেওয়ার পর আক্রান্ত ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাদের মধ্যে কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি পরিলক্ষিত হয়নি।

এমনকি অধিকাংশের শ্বাসকষ্ট হয়নি এবং অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়েনি। বয়স্ক ও কো-মরবিডিটির কারণে কিছুসংখ্যক রোগীর শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন প্রয়োজন হয়েছে। টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া পর মৃত্যু হয়েছে মাত্র একজনের।

সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে করা একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই গবেষক দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. সিরাজুল ইসলাম এবং ডা. তানভীর আহমদ নিজামী। কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনার আক্রান্ত ২০০ জনের ওপর ওই গবেষণা করা হয়।

এতে দেখা যায়, আক্রান্ত এক ৭৫২ জনের মধ্যে ২০০ জন টিকার প্রথম ডোজ নেন। তাদের মধ্যে ১৬৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়নি। এই হার ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ। মাত্র ৩৫ জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এই হার ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে তাদের মধ্যে কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি লক্ষ্য করা যায়নি।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট। এই শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু ঘটে। তবে এই গবেষণায় দেখা যায়, করোনা টিকা নেওয়াদের মধ্যে ১৭৭ জনের কোনো শ্বাসকষ্ট পরিলক্ষিত হয়নি। এই হার ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে ১৮৪ জন রোগীর জন্য অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়নি। এই হার ৯২ শতাংশ। তবে বয়সের তারতম্য, বার্ধক্যজনিত কারণ ও বিভিন্ন কো-মরবিডিটির কারণে মাত্র ৮ শতাংশ রোগীর শ্বাসকষ্ট ও অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

করোনা আক্রান্তদের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, হাঁচি ও কাশি। গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর লিঙ্গভেদে পুরুষ ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৯১ শতাংশ নারীর মধ্যে কোনো ধরনের কাশি ও হাঁচি পরিলক্ষিত হয়নি। একই সঙ্গে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ ও ৫৫ দশমিক ৫ জন নারী রোগীর যথাক্রমে স্বাদ ও ঘ্রাণে কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।

গবেষণার ইতিবাচক দিক হচ্ছে প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর আক্রান্ত ২০০ রোগীর মধ্যে মাত্র একজনের আইসিইউতে ভর্তির প্রয়োজন হয়। ছয় দিন পর ওই রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত ওই ব্যক্তির দুই বছর আগে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ১৯০ জন নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। বাকি ৯ জনের শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন।

গবেষণা দেখা যায়, টিকা নেওয়ার পর আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল, তা গড়ে পাঁচ দিনের বেশি পরিলক্ষিত হয়নি। তাদের সর্বনিম্ন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৯০ শতাংশ। সবার গড় স্যাচুরেশন ছিল ৯৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা টিকা নেননি, তাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৮৫ শতাংশ বা তার কম। যা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে টিকা নেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলেও মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। মৃত ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া তার বিভিন্ন রোগ ছিল। আক্রান্ত হওয়ার পর তার আইসিইউর প্রয়োজন হয়েছিল। তবে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া অন্যরা ভালো আছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.