আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করেনি বলে আজকে দেশের এ অবস্থা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ কেন শহীদ জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া নিয়ে কথা বলছে। কারণ তাদের আর কিছু নেই। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সে জন্য আজ তারা এসব ইস্যু নিয়ে আসছে। অথচ ইস্যু হচ্ছে টিকা। মানুষকে বাঁচাতে হলে টিকা দরকার। এ পর্যন্ত চার শতাংশ মানুষকেও টিকা দিতে পারেনি।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন যে অবস্থায় বসবাস করছি এটা হচ্ছে একটা মুখোশ। একটা ছদ্মবেশী বাকশাল। সাংবাদিকরা নিজেরাই লেখেন না। কারণ একটু এদিক-সেদিক হলেই জামিন অযোগ্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হবে। মূল কথা হলো সরকার আসল ইস্যুটা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে চায়। আমরা দেখছি, পত্রপত্রিকাগুলো এখন সেই লাইনে চলে গেছে। যেটা ইস্যু না, ‘পরীমনি’, ‘তমুক মণি’- এসব নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, যে দেশের জন্য আমরা রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছি, সেই বাংলাদেশকে তারা একটি একনায়কতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমাদের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। আবার ৫০ টাকা কেজির নিচে মোটা চালও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অত্যাচার কী চলতেই থাকবে? না। এ রকম চলতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে এসব ইস্যু তৈরি করে। গণতন্ত্র হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ কোনোদিন গণতন্ত্র বিশ্বাস করেনি বলে আজকে দেশের এ অবস্থা। তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করেছে।
মানুষের দৃষ্টিকে সব সময় অন্যদিকে নিতে চায় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেটা ইস্যু না, যেমন পরীমনিকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। ফলে বিষয়টা এমন একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে দেশকে সম্পূর্ণভাবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আজকে আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে তত জাতি বিপন্ন থাকবে।
তিনি বলেন, ৭০ সালে তারা বলেছিল গণতন্ত্র দেবে, আট আনা কেজি চাল খাওয়াবে। তখন তারা বলেছিল, সোনার বাংলা শ্মশান কেন। এই পোস্টারও তখন ছাপিয়েছিল। এসব বলে ৭০ সালে পাস করেছিল। পরে ৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হলো- তখন তারা সব পালিয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করল। এটা ইতিহাস। এ সময় তিনি আরো বলেন, এখানে আমি ও জাফরুল্লাহ ভাইসহ যারা বসে আছি- সবাই মুক্তিযোদ্ধা। আমরা ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিনি।
ফখরুল বলেন, আজ মানুষকে বাঁচাতে হলে টিকা দরকার। আপনারা কতটুকু টিকা জোগাড় করেছেন। চার শতাংশও যোগাড় করতে পারেননি। কিন্তু প্রতিদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, এই আসছে পাঁচ লাখ, এই আসছে ১০ লাখ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চার ভাগের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়নি। কারণ তারা দুর্নীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মাথার মধ্যে সব সময় থাকে কোনটিতে কমিশন বেশি পাব।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে যখন চীন-রাশিয়া টিকা নিয়ে এলো; তখন তাদেরকে বিদায় করে দেওয়া হলো। সরকার ভারতের টিকার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে উঠল। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি হলো- তিন কোটি টিকার জন্য অ্যাডভান্স করল, কিন্তু মাত্র টিকা দিল ৭০ লাখ। এটা কেন হলো? কারণ একজন ব্যক্তিকে দুর্নীতিতে সাহায্য করার জন্য এ কাজটি করা হলো।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।