আওয়ামী লীগ যতক্ষণ না গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চায়, তাদের দোষী নেতাকর্মীরা বিচারের মুখোমুখি না হয় এবং যতদিন পর্যন্ত দলটির নেতৃত্ব ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে বের না হয়ে আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে বাংলাদেশের জনগণ তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেবে না। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ যদি অবৈধ বিক্ষোভ করার সাহস করে তবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে শফিকুল আলম বলেছেন, ‘আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেব না।’
আওয়ামী লীগ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচারপত্র বিলি, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুল আলম এ কথা লিখলেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দলটির নেতা-কর্মীর অনেকেই বিদেশে। দেশে থাকা নেতারা আত্মগোপনে। এমন অবস্থায় ফেসবুকে দলটি কর্মসূচির কথা জানাল।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ন্যায্য বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেনি। আমরা সমাবেশ এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আজ (বুধবার) সকালে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবু সরকার কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেননি।’
সরকারের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিত—এ প্রশ্ন তুলে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘জুলাই-আগস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়েছেন কয়েক শ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনামলে পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়।’
যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ এই গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে; যতক্ষণ তাদের অন্যায়কারী নেতা-কর্মীরা বিচার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে; যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল?’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে? কোনো দেশই জবাবদিহি ছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অনুমতি দেয় না। এই খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে বাংলাদেশের জনগণ।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।