অস্তিত্ব সংকটে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত
টেলিযোগাযোগ খাত মূলত দুটি সরল পদ্ধতিতে সেবা দিয়ে আসছিল। বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে বাণিজ্যিক সেবা দেয়া হতো এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন কিংবা বাসাবাড়িতে দেয়া সেবা তাদের রিটেইল ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু গত বছর করোনা হানা দেয়ার পর বিশ্বজুড়ে ঘরে থেকে অফিসনির্ভরতা বেড়েছে। এতে দেখা গেছে বাণিজ্যিক টেলিযোগাযোগ সেবা কম প্রয়োজন পড়ছে। অন্যদিকে বাসা থেকে কাজে ব্যক্তিগত ও পেশাগত বা বাণিজ্যিক কাজে একই ব্রডব্যান্ড ব্যবহূত হচ্ছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে টেলকো খাতের ব্যবসা পদ্ধতি পরিবর্তন সময়ের প্রয়োজনে দাঁড়িয়েছে। খবর টেকরাডার।
বাসা থেকে কাজের কিছু সুবিধা থাকলেও বেশকিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী নিজেদের ব্যক্তিগত সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারে যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে, গোপনীয় বাণিজ্যিক ডাটা সরবরাহেও একই নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করছে। অধিকাংশ ব্যবহারকারীর সাইবার নিরাপত্তা জ্ঞান না থাকায় এতে বড় আকারের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে রিটেইল সেবা ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি ৮ ঘণ্টা হয়তো জুমে কানেক্ট থাকছেন, আবার ৩ ঘণ্টা নেটফ্লিক্স দেখছেন। আগে রিটেইল খাতে টেলিযোগাযোগ শিল্পকে এ চাপ বহন করতে হতো না। আগে যেভাবে বাণিজ্যিক ও রিটেইলে দুই সেবা দিয়ে আসছিল টেলকো খাত এখন তা খাটছে না। দূরবর্তী কাজ বা অফিসের বাইরে থেকে কাজের মডেলকে নিউ নরমালে পরিণত করেছে কভিড-১৯। এ জায়গাতে এসে টেলকো খাত নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বাসা থেকে কাজ করা কোনো ব্যক্তির ওপর কি এখন তারা করপোরেট রেট আরোপ করতে পারবে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা হিসেবে জায়গা নিয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ও রিটেইল সেবার মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে যদি টেলকো খাত নতুন সমাধান বের করতে পারে তা হবে এ খাতের জন্য সম্ভাবনাময়।
অনলাইন নির্ভরতার সুবিধা নিতে পারে টেলকো খাতও। এখন সরাসরি বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মডেল অনুসরণ করে গ্রাহকদের কাছে নিজেদের সেবা উপস্থাপন করতে হবে। করোনাকালে অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ক্রয়ে অভ্যস্ত হওয়া গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে না টেলকো খাতের।
প্রকৃতপক্ষে করোনা মহামারীর বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসছিল। প্রযুক্তি শুধু বিলাসের বিষয় নয়, নিত্য ব্যবহার্য বাহকে পরিণত হচ্ছিল। মহামারীতে এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে এ বিষয়ে সবাই একমত। অনলাইননির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিও বেড়েছে। সাইবার হামলা ও র্যানসমওয়্যার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাত। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে শুরু করে চলতি বছরের জুলাই নাগাদ এক বছরে র্যানসমওয়্যার হামলা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব যেহেতু হাইব্রিড কাজের মডেল; মানে কিছু অফিস কিছু বাড়িতে অনুসরণ করছে সেখানে টেলকো শিল্পকেও তাদের কর্মপরিধি ও কর্মপদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে হবে। বৈশ্বিক মহামারী শিগগিরই পৃথিবী থেকে যাচ্ছে না; এ বাস্তবতা মেনে নিলে বাসা থেকে অফিস সহসাই কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। অধিক কার্যকর, সহযোগিতাপূর্ণ ও অধিক গ্রহণযোগ্য সেবা দেয়ার মাধ্যমে করোনাকালে টেলিযোগাযোগ খাতও তাদের বিক্রি বাড়াতে পারে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট চলমান বৈশ্বিক লকডাউন টেলকো খাতকে আমূল পাল্টে দেবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হওয়া টেলকো খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।