অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের অবৈধ নাগরিকদেরও ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের সংখ্যা কত, আর কবে থেকে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশিদের যেন হাতকড়া পরিয়ে অসম্মানজনক উপায়ে দেশে ফেরত পাঠানো না হয়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গত মাসে বাংলাদেশ সরকারকে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করেছে। এ ব্যাপারে সরকারকে একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে সে দেশের অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জানিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটছে। তবে বাংলাদেশের লোকজনকে যাতে অসম্মানজনক উপায়ে ফেরত পাঠানো না হয়, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত আনার বিষয়ে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের লোকজনকে ফেরানোর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটি অনুসরণের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অর্থাৎ নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের লোকজনকে ফেরত নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের লোকজনকে যেভাবে হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সেটি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ও অবস্থান: ঢাকা ও যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তারা ধারণা দিয়েছেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রাজ্য নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেটিকাটে অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সরকারি দপ্তর অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি তদারক করে থাকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত মাসে মার্কিন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অন্যান্য দেশের মতো অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ঢাকার সহযোগিতা চেয়েছে ওয়াশিংটন। সরকারও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সম্মানজনকভাবে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে চায় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ চায় না অন্যান্য দেশের মতো হাতকড়া পরিয়ে বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে আসুক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন কিছু করবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে তার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করছেন, তাতে আগাম কিছু অনুমান করা কঠিন। তবে কলাম্বিয়াসহ একাধিক দেশের অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে যেভাবে হাতকড়া পরিয়ে সে দেশগুলোতে ফেরত পাঠিয়েছেন, সেটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে না–ও ঘটতে পারে। তা ছাড়া সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবৈধ হওয়া লোকজনের সংখ্যাটা ততটা বেশি নয়। ফলে ভাড়া করা উড়োজাহাজে বাংলাদেশের লোকজনকে ফেরত পাঠাবে, এমন সম্ভাবনাও কম। আর অতীতে অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড কিংবা অবৈধ হয়ে পড়ার পর দেশে ফেরত আসার ক্ষেত্রে বৈরী আচরণ না করলে বাংলাদেশের লোকজনের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা হবে না বলে সূত্রগুলোর মত।

তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা শাসনামলে কোনো কিছু আগাম বলা খুব কঠিন। কারণ, কলাম্বিয়া প্রথম দফায় তাদের লোকজনকে সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজে দেশে ফিরিয়ে নিতে না চাওয়ার পরেই দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। পরে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে কলাম্বিয়া। আর অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধের স্বার্থে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চড়াও হয়েছেন কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর।

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.