অবলা প্রাণীর প্রতি আচরণে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম প্রাণীদের প্রতি সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়। তারাও মহান আল্লাহর মাখলুক। তাদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া, তাদের প্রতি অবিচার করা ইসলাম সমর্থন করে না। অনেকে প্রাণীদের কষ্ট দেওয়া বা অহেতুক প্রাণী হত্যাকে স্বাভাবিক মনে করে, তবে বাস্তবতা হলো এটি মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ।
শুধু কোনো প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার কারণে মানুষের সারা জীবনের আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গেছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল, এ অবস্থায় তাকে আহারও করায়নি এবং একে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে কীট-পতঙ্গ খেতে পারত। ফলে সেটি অনাহারে মারা গেল।

 

জুহরি (রা.) বলেন, মানুষকে (নিজের আমলের ওপর) ভরসা করাও উচিত নয় এবং (আল্লাহর রহমত থেকে) নিরাশ হওয়াও উচিত নয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৬)
আবার হাদিসে এর বিপরীত চিত্রও পাওয়া যায়। শুধু কোনো প্রাণীর জীবন রক্ষার অসিলায় মহান আল্লাহ কারো কারো সারা জীবনের গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। আবু হুরায়রা (রা.)  থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল।
 

সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে ওপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার আমল কবুল করলেন এবং আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।
সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে? তিনি বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই পুণ্য রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)

এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণ করাও সওয়াবের কাজ। এর মাধ্যমেও মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। হয়তো এ জন্যই মহানবী (সা.) বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রহমান থেকে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)এমনকি মহান আল্লাহ মানুষের জন্য যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল করেছেন, সেসব প্রাণীকেও খাবারের জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অহেতুক কষ্ট দেওয়ার অনুমতি নেই। যখন কোনো হালাল প্রাণীকে জবাই করা হবে, তখন তাকে অযাচিত কষ্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা সবার ওপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন হত্যা করবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে; আর যখন তোমরা জবাই করবে, তখন উত্তমরূপে জবাই করবে, তোমাদের ছুরি ধারাল করবে এবং জবাইকৃত জন্তুকে ঠাণ্ডা হতে দেবে। (নাসায়ি, হাদিস : ৪৪১১)

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান যুগেও অনেককে শুধু কয়েকটি ভিউর আশায়ও অবলা প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে ভিডিও বানাতে দেখা যায়। অবলা প্রাণীদের ভয় দেখিয়ে বা উত্ত্যক্ত করে মজা নিতে দেখা যায়। কেউ কেউ এতটাই নিচে নেমে যায় যে অবলা প্রাণীকে পুড়িয়ে মেরেও ভিডিও ধারণ করে। অথচ মহান আল্লাহর কোনো প্রাণীকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করার সুযোগ নেই। কোনো অপরাধে তাদের পুড়িয়ে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কারো নেই। মুহাম্মাদ ইবনু হামযাহ আল-আসলামী (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক অভিযানে তার পিতাকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। হামযাহ (রা.) বলেন, আমরা অভিযানে বের হওয়ার সময় তিনি বলে দিলেন যে অমুক ব্যক্তিকে পেলে আগুন দিয়ে পোড়াবে। আমি পিঠ ফিরে চলে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে আবার ডাকলেন। আমি তাঁর নিকট ফিরে এলে তিনি বললেন, তোমরা অমুক ব্যক্তিকে পেলে হত্যা করবে, আগুনে পোড়াবে না। কেননা শুধু আগুনের প্রভুই আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়ার অধিকারী, অন্য কেউ নয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬৭৩)

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.