অনুমতি ছাড়া কাটা যাবে না গাছ: আদালত
গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে মর্মে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের শুনানি করে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রায়ে সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরকে গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার জন্য পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসরদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সিভিল সার্জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। যারা জেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতি প্রদান করবেন।
আরও এক আদেশে আদালত জনপ্রশাসন সচিবকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়, যারা উপজেলা পর্যায়ের গাছ কাটা সম্পর্কে অনুমতি প্রদান করবে।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয় যে, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ এর অধীনের রোপণকৃত গাছসমূহ কাটা যাবে না বরং গাছের সমমূল্যে টাকা রোপণকারীকে প্রদান করতে হবে। এই মর্মে সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তন আনায়নেরও নির্দেশনা প্রদান করেন।
আদালত রায়ে বলেন, দেশে দিন দিন তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকসংখ্যক গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ব্যাপকভাবে গাছ কর্তন করা হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করবে।
আদালত আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ বাংলাদেশে থাকা দরকার সে পরিমাণ গাছ নেই এবং এই গাছগুলোকে রক্ষা করা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
সারা দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পরিবেশদূষণ বন্ধ করে মানুষের জীবন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০২৪ সালের ৫ মে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত বছরের ৭ মে, ঢাকার দুই সিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা কেন মানবাধিকারের পরিপন্থী হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী বপনকৃত গাছ না কেটে বরং উক্ত গাছের মূল্যের সমপরিমাণ টাকা কেন বপনকৃত ব্যক্তিদের প্রদান করা হবে না এবং গাছ কাটতে হলে সকল পর্যায়ে কেন ৭ সদস্যর কমিটির হতে অনুমোদন নিতে হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর আজ চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল মঞ্জুর করে রায় দেন।
এইচআরপিবির পক্ষে রিট আবেদনকারি হলেন, অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এখলাস উদ্দিন ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ই। অপরদিকে বিবাদীরা হলেন, সচিব মন্ত্রিপরিষদ, পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, ডিজি পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা সিটির দুই মেয়রসহ মোট ১৫ জন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। ডিএজি মো. শফিকুর রহমান রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন।