অক্টোবর : স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস
অক্টোবর মাস স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পরিচিত। এ সময় স্তন ক্যানসার সম্পর্কে শিক্ষাদান, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণে উৎসাহ দেওয়া হয়। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাসের সূচনা হয়।
স্তন ক্যানসার এমন এক ধরনের ক্যানসার, যা স্তনের কোষে শুরু হয় এবং এটি নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই ঘটতে পারে। তবে নারীর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে পুরুষ স্তন ক্যানসার রোগীও পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু অনেকেই এ রোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। পুরুষদের স্তন ক্যানসার এখনও সমাজে ট্যাবু হিসেবে রয়ে গেছে। এ রোগটি তখনই ঘটে, যখন স্তনের কোষগুলো অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় ও সংখ্যাবৃদ্ধি করে পিণ্ড বা ভর তৈরি করে। যথাযথ চিকিৎসা না হলে এসব ক্যানসার কোষ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্তন ক্যানসারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন- প্রথমত, BRCA1 ও BRCA2 জিনের মিউটেশন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের হার বেশি। দ্বিতীয়ত, হরমোনের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের উচ্চমাত্রা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে যাদের মাসিক শুরু হয়েছে কম বয়সে, যাদের মেনোপজ হয়েছে দেরিতে, যারা সন্তান জন্ম দেননি বা প্রথম সন্তান দেরিতে জন্ম দিয়েছেন, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। তৃতীয়ত, জীবনযাত্রার ধরনও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, শারীরিকভাবে সক্রিয়তার অভাব ইত্যাদি। এ ছাড়া রেডিয়েশন ও কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
স্তন ক্যানসারের সাধারণ সতর্কতামূলক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্তন বা আন্ডারআর্মে পিণ্ড বা ঘনত্ব অনুভব করা, স্তনের আকার, আকৃতি বা রঙে পরিবর্তন, স্তন বা স্তনবৃন্তে অব্যক্ত ব্যথা, স্তনের ত্বকে ডিম্পল বা লালচেভাব, বাহুতে ফোলা বা পিণ্ড এবং স্তনে ক্রমাগত চুলকানি। তবে এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উত্তম। যেমন- সুষম খাদ্য গ্রহণ, প্রচুর ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম (যেমন- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা), ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করা- এসব অভ্যাস স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। হরমোন থেরাপি দীর্ঘমেয়াদে না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, বিশেষ করে মেনোপজ-পরবর্তী নারীর ক্ষেত্রে। স্তন্যপান করানো নারীর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষ করে ম্যামোগ্রাফি ও স্ব-পরীক্ষা, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে সাহায্য করে। যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে জেনেটিক পরামর্শ নেওয়া কার্যকর হতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান ও যোগব্যায়াম সহায়ক হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য-পরীক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।

Comments are closed.