পশ্চিম তীরে প্রথম ট্যাংক মোতায়েন করল ইসরায়েল

সামরিক অভিযান জোরদারের শঙ্কা

দীর্ঘ ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অঞ্চলটিতে সাঁজোয়া ট্যাংক পাঠায় সেনাবাহিনী। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের শরণার্থীশিবিরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সেনাবাহিনীকে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এই অবস্থায় ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে গাজার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে পরিণত করতে পারে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, পশ্চিম তীরকে হয়তো আরেকটি গাজায় পরিণত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের তরফ থেকে এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এল, যখন গাজায় চলমান ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। হামাস চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত ৬ জিম্মিকে মুক্তি দিলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থান রোধ করতেই পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের জন্যও সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। খবর সিএনএনর।

তেল আবিবের কা গেল বৃহস্পতিবার তিনটি বাসে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও নব্বইয়ের দশকে ফিলিস্তিনি বিপ্লবের সময় জেরুজালেমে বাসে আত্মঘাতী হামলার রক্তক্ষয়ী অতীত মনে করেই সতর্ক ইসরাইল সরকার। এমন পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে শুক্রবারই তিনটি অতিরিক্ত ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

তবে এখানেই শেষ নয়। ২০০২ সালে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি শহরে বড় পরিসরে সামরিক অভিযান- ‘অপারেশন ডিফেন্সিভ শিল্ড’ পরিচালনার সময় প্রথমবার পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করেছিল ইসরায়েল।

গাজায় যুদ্ধের ১৫ মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও দখলদারদের হামলায় প্রাণ গেছে ৯শ’র বেশি ফিলিস্তিনির, আহত হয়েছে আরও প্রায় সাত হাজার মানুষ। গেল জানুয়ারিতে উপত্যকায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরের সময় থেকেই পশ্চিম তীরে নজর সরায় যুদ্ধবাজ ইসরায়েল। পশ্চিম তীরের উত্তরে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক মানুষের। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নাম দেওয়া হলেও পশ্চিম তীরের বাড়িঘর, স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে অন্তত ৪০ হাজার বাসিন্দাকে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। জেনিনের পাশাপাশি তুলকার্ম আর নূর আল-শামসেও চলছে সেনাবাহিনীর উচ্ছেদ অভিযান।

উচ্ছেদ অভিযানের শিকার একজন বলেন, ‘নিজেদের বাড়ি গুঁড়িয়ে যেতে দেখছি আমি। তুলকার্মের অন্যতম পুরোনো বাড়ি ছিল এটি। হঠাৎ পৃথিবীর বুক থেকে বাড়িটির অস্তিত্ব মুছে দেয়া হলো, এ বাড়ির সব স্মৃতি মুছে দেওয়া হলো।’

আরেকজন বলেন, ‘২৩ দিন আগে বাড়ি ছেড়েছি। জানি না কী ঘটছে সেখানে? আমাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে? নাকি এখনও বাড়িটা আছে? ভেতরের সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেছে? কিছুই জানি না।’

গেল বছর জুলাইয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের কয়েক দশকের অবরোধ অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত আইসিজে। একইসঙ্গে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে সব দখলদারদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়। আদালতের এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেই দখলকৃত অঞ্চলে সেনা অভিযানের পরিধি ফের বাড়িয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।

Comments (0)
Add Comment