বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক ডা.এ কে আজাদ খান বলেছেন, ‘উন্নত দেশের চেয়ে আমাদের মতো দেশে ডায়াবেটিস অধিক মহামারি রূপে আর্বিভূত হচ্ছে। মোট রোগীর ৯৫ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এ ডায়াবেটিসের শতকরা ৭০ ভাগ সম্পুর্ণরুপে প্রতিরোধযোগ্য। ডায়াবেটিস একবার হয়ে গেলে সারাজীবনের রোগ এবং ব্যয়সাধ্য। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখলে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস ও করোনা দুটোই মহামারি। গবেষণা ফলাফল না থাকলেও ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা ঝুঁকি অন্যান্য রোগীদের চেয়ে হয়তো বেশি। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা আরও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা নিয়ে বাঁচতে জানতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সচেতন করে তুলতে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের প্রাক্কালে দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাডাস-এর উদ্যোগে শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগের বারডেমে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাডাস মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, বারডেম মহাপরিচালক কাইয়ুম চৌধুরী, ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.অরুপ রতন চৌধুরী, পরিচালক (প্রকাশনা ও জনসংযোগ) ফরিদ কবির ও বাডাসের সচিব মো. আবু তাহের।
বাডাস সভাপতি বলেন, ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় (ইউএন রেজোলুশন ৬১/২২৫ )। এর ফলে গত ১৪ বছর ধরে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রে প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর জাতিসংঘের একটি দিবস হিসেবে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এ দিবসের প্রধান লক্ষ্য । ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যানুসারে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪৬ কোটি। ( সূত্র : আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস, ৯ম সংস্করণ)। বহুলাংশে প্রতিরোধযোগ্য রোগটি এখনই প্রতিরোধ না করা হলে ২০৪৫ সাল নাগাদ রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬৯ কোটিতে পৌঁছার শঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৮৩ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। তাছাড়া, এ কথাও উল্লেখ করতে হয় যে, ডায়াবেটিস আছে এমন অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেনই না যে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এছাড়াও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ -২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় , গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । তাছাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি । এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ -২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ অবস্থায় যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সচেতন করা এবং যারা এখনও আক্রান্ত হননি তাদেরকে রোগটি প্রতিরোধে সচেতন করে তোলাই এ দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য।