দীর্ঘ এক বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ মার্চ খুলে দেব। প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিকে প্রতিদিন আনা হবে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাসে আনব। আর বাকি শ্রেণির ক্লাসগুলো প্রথমে সপ্তাহে একদিন করে হবে। তার কয়েকদিন পরে সপ্তাহে দু’দিন করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আনা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিকের দিকে আমরা নিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।
তবে আপাতত প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই পরিষ্কার-পরিছন্ন করাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আর আমাদের শিক্ষক ও কর্মচারিদের টিকা দেওয়ার যে বিষয়টি, সেটি ৩০ মার্চের আগেই সম্পন্ন করা হবে।এছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের প্রয়োজন হলে সেটিও ৩০ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির জন্য ৮০ কর্মদিবসের একটি সিলেবাস প্রণয়ন করেছি। এসএসসি শিক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ৮০ কর্মদিবস ক্লাস করিয়ে আমরা পরীক্ষা নেব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি আমরা ৩০ মার্চে খুলতে পারি অথবা তার পরে খুলতে হয়- তাহলে তার পরবর্তী ৬০ কর্মদিবস ক্লাস করিয়ে এসএসসি পরীক্ষা নেব। একইভাবে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ৮০ কর্মদিবস ক্লাস করিয়ে তাদের পরীক্ষা নেব।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে ছয়টি মন্ত্রণালয় বৈঠকে বসে।
বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অংশ নেন।
এ ছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিবেশ পর্যালোচনা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সেদিন জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলে দেওয়া যায়- তা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একইদিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে। আর হল খুলে দেওয়া হবে ১৭ মে।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানানো হয়।