২০২৪: প্রযুক্তি খাতে অস্থিরতার বছর

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঠেকাতে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা, যা চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতকে। ‘ইন্টারনেট বন্ধ করিনি, বন্ধ হয়ে গেছে’ এই বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক।

বক্তব্য প্রমাণে ডাটা সেন্টার পরিদর্শনের নাটকও করেন তিনি। ইন্টারনেট না থাকায় ব্যাংক লেনদেন বন্ধ, বিদেশি গ্রাহকদের অর্ডার বাতিল, নেতিবাচক রিভিউয়ে র‌্যাংকিং হারানোর সমস্যায় পড়ে ফ্রিল্যান্সার, আইটি এবং বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলো।

চলতি বছরের শুরুটা স্বাভাবিক হলেও জুলাইয়ে এসে বড় ধরনের ধাক্কা খায় দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান ঠেকাতে ১৮ জুলাই ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে ইন্টারনেট বন্ধ করেছি।’

এরপর থেকে ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে চলে নানা নাটক। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে কখনো সঞ্চালন লাইন, কখনো ডাটা সেন্টার পোড়ার অজুহাত দেন পলক। বক্তব্য প্রমাণে মহাখালীতে ডাটা সেন্টার পরিদর্শনের নাটকও করেন।

ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষয়ক্ষতিসহ নানা কারণে ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আর পরীক্ষামূলক মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয় ২৮ জুলাই। তবে সরকারবিরোধী গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বন্ধ থাকে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক। এই তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের তলবও করা হয়। চাপের মুখে ৩১ জুলাই চালু হয় সামাজিক মাধ্যম।

এদিকে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনলাইন ব্যবসায় ১ হাজার ৭৫০ কোটি; সফটওয়্যার রফতানি খাতে ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতির দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের খোঁজে ভারত, দুবাই, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে যায় ফ্রিল্যান্সার ও আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো। বছরে ৫০ শতাংশ কমেছে স্টার্টআপে বিনিয়োগ।

২০২৪ সাল এসে আইএসপির পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদেরও তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার দেয়ার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। রাউটারের মাধ্যমে যেকোনো স্থানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বছরের শেষে এসে জাতীয় স্বার্থের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে ব্যান্ডউইথ নেয়ার প্রস্তাব বাতিল করেছে বিটিআরসি।

Comments (0)
Add Comment