ক’মাস আগে একটি ব্যতিক্রমী মজার খবর ছাপা হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার পত্রিকাগুলোতে, ‘’ভারতে তিমি মাছের বমি বিক্রি করে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছেন এক ব্যক্তি!’’
ভারতের এনডিটিভি জানায়, তিমির বমি বিক্রি করতে গিয়ে মুম্বাইতে গ্রেপ্তার হন পঞ্চাশোর্ধ ওই ব্যক্তি। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ১.৩ কেজি বমি যার বাজার মূল্য ১.৭ কোটি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২.০ কোটি টাকারও বেশি। ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এটি বিক্রি করা নিষিদ্ধ।
বমির কথা শুনলে গা ঘিনঘিন করেনা এমন মানুষ গোটা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে বমি যদি হয় মহামূল্যবান কিছু, আপনার ‘গা ঘিনঘিন’ ভাবটা হয়তো নিমিষেই হারিয়ে যেতে পারে।
হ্যা, হাসি নয়, সত্যি। বমিও কিন্তু মূল্যবান, সেটা যদি হয় তিমির বমি। শুধু ভারতই নয়, ২০১৬ সালে ওমানের তিন জেলেও তিমির বমি পেয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে গিয়েছিলেন। খালিদ আল সিনানি নামের মধ্য তিরিশের এক ওমানি জেলে ও তার দুই সঙ্গী কুরায়াত প্রদেশের সমুদ্র উপকূলের কাছে মাছ ধরতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ তিমির বমি ভাসতে দেখেন। তারা জানান, এই ভাসমান বমি থেকে তখন প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিলো। কিন্তু মাছের বদলে তিমির বমি পেয়ে উল্লসিত হয়ে পড়েন সবাই।
কি আছে তিমির বমিতে? কেন মানুষ তা সংগ্রহে পাগলের মতো ঘুরে বেড়ায়? কি হয় এই বমি দিয়ে? এসব প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে? চলুন জেনে নেয়া যাক এসব প্রশ্নের উত্তর। তিমি মাছের বমি অ্যাম্বারগ্রিজ (Ambergris) নামে পরিচিত। তিমির বমি বা অ্যাম্বারগ্রিজ হলো একজাতীয় মোমের মতো পদার্থ, যা স্পার্ম তিমির অন্ত্র থেকে নির্গত হয়।
তিমির শরীরের অ্যাম্বারগ্রিজ হল পারফিউম বানানোর মূল উপকরণ। পারফিউমের সুগন্ধ বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয় অ্যাম্বারগ্রিজ। এটি অত্যন্ত দামি পারফিউম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর সাহায্যে পারফিউম দীর্ঘস্থায়ীও হয়। স্বাভাবিক ভাবেই আকাশছোঁয়া দাম অ্যাম্বারগ্রিজের।
বিশ্বের সুগন্ধী প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছে তিমির বমির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর সাগরে এই অমূল্য বমি পাওয়া যায় কালেভদ্রে।
জীববিজ্ঞানীদের মতে, তিমি মাছের অন্ত্রে অ্যাম্বারগ্রিজ তৈরি হয়। তিমি মাছের অন্ত্রের ভেতর জ্বলন কমতে একধরনের ক্ষরণ হয়ে থাকে যা থেকে তৈরি হয় অ্যাম্বারগ্রিজ। বমি বা মলের সঙ্গে তা পরে তিমির শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।