চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা যদি দাম না কমান তাহলে বিদেশ থেকে সরু চাল আমদানির হুমকিও দিয়েছেন মন্ত্রী। অন্যদিকে চালকল মালিকরা বলছেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়ে কাজ না করে শুধু মিল মালিকদের হুমকি দিলে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সংশয় আছে তাঁদের মধ্যে।
মঙ্গলবার খাদ্যভবনে চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে কঠোর বার্তা দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, বাজারে চালের দাম ১৫ দিন আগে যা ছিল, সেই দামেই পুরো অক্টোবর মাস চাল বিক্রি করতে হবে। মিলগেটে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা সর্বোত্কৃষ্ট মিনিকেট চাল দুই হাজার ৫৭৫ টাকা এবং আটাশ চালের দাম দুই হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভালো মিনিকেট প্রতি কেজি সাড়ে ৫১ টাকা ৫০ পয়সা এবং আটাশ চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি করতে হবে। কোনোভাবেই আর চালের দাম বাড়ানো যাবে না। গত এক সপ্তাহে যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তাও কমিয়ে আনতে হবে। নইলে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করবে সরকার।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা চাল ব্যবসায়ী এবং অটো, মেজর, হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েকুজ্জামান গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এখন ৫২ থেকে সাড়ে ৫২ টাকায় মিনিকেট বিক্রি করছি। এই চাল খুচরা মার্কেটে কিভাবে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা হয়ে যাচ্ছে? এই দায় কী আমাদের? আমরা যদি মিলগেটে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে চাল বিক্রিও করি, বাজারে সেটার প্রভাব কতটা পড়বে বুঝতে পারছি না।’
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসাধু চালকল মালিক অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুদ করে রাখার জন্য চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। আমার নিজের এলাকায় হাজার হাজার টন ধান মজুদ রয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মিল মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে লায়েকুজ্জামান বলেন, ‘অবৈধ মজুদদারদের ধরার দায়িত্ব সরকারের। আমরাও চাই সেটা হোক। কিন্তু সব সময় আমাদের ওপরেই চাপ দেওয়া হয়। মজুদদার, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কিছু হয় না।’
বৈঠকে মিল মালিকরা বলেছেন, তাঁদের কাছে কোনো ধান-চাল অবৈধ মজুদ নেই। তাঁদের এই বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘বেশি গলাবাজি করবেন না। আমার কাছে সব খবর আছে। অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু হয়েছে। আমার নিজ এলাকা নওগাঁ দিয়েই অভিযান শুরু করেছি। এক দিনে ১৮টি মিলে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পরদিন হাসকিং মিল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে গিয়ে অভিযান না চালানোর জন্য অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন। বলেছেন, আমরা বাজারে সরবরাহ বাড়াচ্ছি, দয়া করে পুলিশ পাঠাবেন না। এর পরও কি আপনারা বলবেন কোনো মজুদ রাখেননি।’ মন্ত্রীর বক্তব্যের পর মিল মালিকরা নীরব ছিলেন।
বৈঠকে খাদ্যসচিব ড. নাজমানারা খানুমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যসচিব, কৃষিসচিবসহ দুই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।