১৫ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণের রেকর্ড লেডি বাইকার সুজাতার

গত বছরের (২০২০) ২৯ অক্টাবরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। সেকারণে ২৫ দিন বাইক চালাতে পারেননি। তবুও বাইক চালানো ছাড়েননি সুজাতা।

অদম্য মনোবল আর দুরন্ত সাহসের জোরে নিজের লক্ষ‌্যে ঠিকই পৌঁছে গেছেন। চষে বেড়িয়েছেন দেশের ৬৪ জেলা। ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত মাত্র ১৫ দিনে দেশের ৬৪ জেলা বাইক নিয়ে ভ্রমণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দেশের প্রথম কোনো লেডি বাইকার হিসেবে সলো রাইডে (সিঙ্গেল রাইড) এ রেকর্ড গড়েছেন মানিকগঞ্জের মেয়ে সুজাতা। ভ্রমণের সময় তার সঙ্গী ছিলে চার বছরের পোষা কুকুর জিমি। তাকে কখনো পেছনে কখনো বা সামনে বসিয়ে বাইক চালিয়েছেন সুজাতা।

এর আগেও বাইক চালিয়ে মাত্র ২৮ ঘণ্টায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পৌঁছে রেকর্ড গড়েন সুজাতা। ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সাভার জোনের একজন সক্রিয় সদস্য তিনি।

সুজাতার বাড়ি সিংগাইর উপজেলার উত্তর জামসা নয়পাড়া গ্রামে। ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে লেখাপড়া করছেন। মাঝে পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু মা খুশি না হওয়ায়, এক বছরের মাথায় স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন।

সুজাতার সরকারি চাকরিজীবী মা মোটরসাইকেল চালিয়ে অফিস করতেন। প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থাতেই মায়ের কাছ থেকে বাইক চালানো শেখেন সুজাতা। বাইক চালানো শিখেছেন প্রায় এক ‍যুগের বেশি সময় আগে। সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে ঘুড়ে বেড়ানোর নেশাও।

সুজাতা বলেন, ‘প্রথম দিন সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়েছি। ৬৪ জেলা ভ্রমণের সময় প্রতিটি জেলার সার্কিট হাউসের সামনে ছবি তুলেছি। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরেছি। বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেছি। ৬৪ জেলায় ভ্রমণ এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি পথে চলতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। রাস্তায় থামলেই উৎসুক জনতা ঘিরে ধরত। একজন নারী মোটরসাইকেল চালিয়ে দেশ ভ্রমণ করছেন শুনেই তারা অবাক হতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাইকের প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। প্রিয় কুকুর জেমিকে ৬৪ জেলা দেখাতে পেরে নিজের কাছেও ভালো লাগছে। বাইক নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণেরও ইচ্ছা আছে।’

সুজাতার মা আকলিমা মমতাজ শান্তি বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই সুজাতার দুরন্ত সাহস। সন্তানের যেকোনো অর্জনই মায়ের বড় পাওয়া। দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করে যে রেকর্ড সুজাতা গড়েছে, তার জন্য আমি গর্বিত।’

মানিকগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান লক্ষী চ্যাটার্জী বলেন, ‘সুজাতার অর্জন আমাদের নারী সমাজের অন্যতম বড় অর্জন। তার অর্জন প্রমাণ করে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সবকিছু করতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সুজাতার অর্জনে আনন্দিত। তাকে সাধুবাদ জানাই।’

Comments (0)
Add Comment