১২ বছরে টিকাবঞ্চিত ১৬ শতাংশ শিশু

এক যুগ ধরে বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রমের আওতা বাড়েনি। এই সময়ে টিকা কাভারেজের (টিকা প্রাপ্তি) হার ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ, ১২ বছর ধরে ১৬ শতাংশ শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মূলত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ পরিচালনায় ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সহায়তায় ২০২৪ সালে ৩টি স্বতন্ত্র গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টিকাদানের বিদ্যমান অবস্থা, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় বিষয়ে গবেষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইপিআই কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে কর্মসূচিটি সারা দেশে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা শহরে ১৯৮৯ সালে প্রাথমিকভাবে শুরু হয়। এরপর শুরু হয় অন্যান্য বিভাগীয় শহরে। গত ৪৫ বছরে দেশে টিকাদান কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে। টিকা–প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণের অর্জনও রয়েছে। ইপিআই কাভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভের (২০১৯) পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে ইপিআইয়ের কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে। বর্তমানে তা ৮৪ শতাংশ। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে টিকাদানের পরিস্থিতির ভিন্নতা পাওয়া গেছে। গত ১২ বছরে ইপিআই কভারেজ ৮৪ শতাংশের ওপরে না ওঠায় ১৬ শতাংশ শিশু টিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গবেষণায় ইপিআইয়ের প্রতিবন্ধকতার তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে জনবলের ঘাটতি, অঞ্চল ভিত্তিতে টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা ও প্রচারের অভাব অন্যতম।

ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ও ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ শূন্য। বরাদ্দকৃত জনবলও প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি ২০১৯ ও ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান ২০২৪ অনুসারে, প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ৬ জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন। যদিও তা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হয়নি।

এ ছাড়া জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে টিকাদানকেন্দ্রের অসম বণ্টন রয়েছে। দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকাদানকেন্দ্র নেই। কর্মসূচি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ্দে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ম স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টির সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) এখনো অনুমোদন পায়নি। ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহন ও বণ্টনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ২০২৯ সালের পর স্বল্প আয়ের দেশে টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে গঠিত দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স বা গ্যাভি বাংলাদেশের প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ করলে সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত করতে হবে। কারণ ২০২৯ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়শীল দেশের কাতারে চলে যাওয়ার কথা।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু অ্যান্টিজেন (পিসিভি, ওপিভি ও এমআর) টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে। সারা দেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে টিকা পরিবহনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

 সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

গবেষণার পরামর্শে বলা হয়, শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, জনসংখ্যাভিত্তিক জনবলনীতি বাস্তবায়ন করা, প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা বণ্টন, প্রতি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং টিকা সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

Comments (0)
Add Comment