১০ দিনের বিক্ষোভেে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার ১০ হাজার

যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশি নির্যাতনে আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভের ১০ দিন চলছে। কারফিউ ভেঙ্গে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও পু্লিশি অ্যাকশনের মধ্যেও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন ফ্লয়েডের হত্যায় ন্যায় বিচার চাওয়া আন্দোলনকারীরা।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২৫ মে দিনে ফ্লয়েডকে হত্যা করা হলেও রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের প্রথম দিন থেকে বৃহস্পতিবার (১০ দিন) পর্যন্ত ১০ হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক ফ্লয়েড হত্যায় চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলেও শভিনকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ডেরেক শভিনের সঙ্গে থাকা অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তা- টমাস লেইন, আলেকজান্ডার কুয়ং ও টু থাওয়ের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করা হয়।

কিন্তু প্রতিবাদকারীরা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই হত্যার অভিযোগ আনার দাবি তুলে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিলেন তারা।

তদন্ত শেষে বুধবার ওই চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অপরাধের অভিযোগ এনেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। শভিন ছাড়া বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র ফ্লয়েডকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডকে হত্যার সহযোগিতার দায় মাথায় নিয়ে দুপুরের পর আদালতে হাজির হয়েছেন। পরে আদালত তাদের হেনেপিন কাউন্টি জেলে পাঠায়।

আদালতে পেশ করা মামলার নথিতে শভিনের বিরুদ্ধে মিনেসোটা রাজ্য আইনে খুনের তিনটি ধারার মধ্যে সবচেয়ে কম গুরুতর থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু নতুন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে শভিনের সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

শভিনের সঙ্গে থাকা অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডারে সহযোগিতা ও পরিস্থিতির দাবি ছাড়াই মানব হত্যায় সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরও সর্বোচ্চ ৪০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী বেনজামিন ক্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জর্জ ফ্লয়েডের দেহ সমাহিত করার আগেই গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপ নেয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর দিন রাতেই মিনিয়াপোলিসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির ছোট-বড় বহু শহরে চলা বিক্ষোভের সময় সহিংতা, কোথাও কোথাও লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটে।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের সময় জনতা মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়ালে কিছুক্ষণের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বহু শহরে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ চালিয়ে যায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা। তাদের দমাতে কাঁদানে গ্যাস, মরিচের গুড়া স্প্রে ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পুলিশ। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়।

Comments (0)
Add Comment