নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। গতকাল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআর’র নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। তবে বিশ্বের এতোগুলো দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় রেড এলার্টে থাকতে হচ্ছে আমাদের। কারণ, যে কোনো দেশ থেকেই ভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। পরিচালক জানান, সেই আশঙ্কা থেকে বলছি, সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশিরা ফিরলেও তারা যেন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন।
চীন/সিঙ্গাপুর/দক্ষিণ কোরিয়া/ জাপান/ইরান/ইতালি ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশ হতে আগত যাত্রীদের বাংলাদেশে আগমনের পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পরবর্তী ১৪ দিন নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে তিনি। ডা. ফ্লোরা আরো বলেন, এজন্য আমরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি, যারা বাইরে থেকে আসবেন, তারা বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে মাস্ক ব্যবহার করবেন।
সম্ভব হলে গণপরিবহনে না গিয়ে নিজস্ব যানবাহনে যাবেন, এ সময় পরিবহনের জানালা খোলা রাখবেন। আমরা অনুরোধ করছি, আপনারা আবশ্যিকভাবে বাড়িতে অবস্থান করুণ। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। যদি বাইরে যাওয়া খুবই দরকার হয়, তাহলে মাস্ক ব্যবহার করবেন। আক্রান্ত হয়ে কেউ এলে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমেই তাকে শনাক্ত করে চিকিৎসা দেয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক। বিদেশ থেকে আসা কারও মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যেসব দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, সেসব দেশ ভ্রমণ এড়াতে বাংলাদেশিদের পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবত দুই হাত ধুয়ে নিন। অপরিষ্কার হাতে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করবেন না। শারীরিক অসুস্থতা (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) দেখা দিলে আইইডিসিআর এর হটলাইনে (০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১) ফোন করবেন।
তিনি জানান, আক্রান্ত দেশগুলোতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের খোঁজ নিচ্ছে আইইডিসিআর। করোনা প্রতিরোধে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইইডিসিআরের মতে, করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা ছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে কারো মধ্যে এই রোগের জীবাণু পাওয়া না গেলেও সতর্ক থাকার উপর জোর দিচ্ছে আইইডিসিআর। কেননা, যেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, সেখানে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ না ঘটলেও সিঙ্গাপুরে পাঁচ বাংলাদেশি এবং আরব আমিরাতে একজন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
ডা. ফ্লোরা জানান, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি থাকা পাঁচজনের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। আরো দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায় আছেন। আরেকজন এখনও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। প্রসঙ্গত, চীন থেকে বিশ্বেজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। ৬৪টি দেশ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত চীনে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজারের বেশি।