১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে খালেদা জিয়া অবস্থান করছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। সেসময় বিএনপি ছিল বিপর্যস্ত। দলের নেতৃত্ব কে নেবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন।
দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন তিনি। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। সার্কের চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনী ইতিহাসে তার একটি অনন্য রেকর্ড হলো পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে জয়ী হওয়া।
সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ কারাবাসের পর তিনি সব মামলায় জামিন পান। কারাগারে থাকাকালে তাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি দেশ ছাড়েননি।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। বাড়িটিতে তিনি ২৮ বছর বসবাস করছিলেন। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার বাড়িটি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের আপসহীন নেত্রীতে পরিণত হয়েছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও তার ওপর গ্রেপ্তারি ঝড় নেমে আসে। দেশ ছাড়ার জন্য চাপ থাকলেও তিনি তার অবস্থান থেকে সরে যাননি। গত ১৫ বছরে নানা নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে, কারাগারেও থাকতে হয়েছে। তবু খালেদা জিয়া কোনো আপস করেননি।
তার পুরো রাজনৈতিক যাত্রা আপসহীনতা, দৃঢ়তা এবং সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছে। তাই খালেদা জিয়া হয়ে উঠেছেন দেশের রাজনীতিতে হার না মানা সংগ্রামের নাম।