হার দিয়ে এশিয়া কাপের মিশন শুরু করল বাংলাদেশ। ৩০ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান। এই জয়ের ফলে সবার আগে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে আফগানরা। ১৬ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুজিব উর রহমান। আফগানদের কাছে হেরে যাওয়া শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ আগামীকাল মুখোমুখি হবে টিকে থাকার লড়াইয়ে। দুবাইয়ে সেদিন যে দল জিতবে, তারা যাবে পরের ধাপে। হেরে যাওয়া দল পথ ধরবে বাড়ির। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হাকডাক দিলেও মাঠে তার ছিটে ফোটা দেখাতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটারা। কাজে আসেনি বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামের টোটকা। পুরো ম্যাচেই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী।
মোসাদ্দেক যা একটু চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অন্যদের ব্যাটিং মোটেও টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। পুরো ম্যাচে মাত্র ১০টি চার মেরেছে বাংলাদেশ। একমাত্র ছক্কাটি এসেছে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে। তাও আফগান ফিল্ডারের পা বাউন্ডারি সীমানা স্পর্শ করায়। তাইতো টসে জিতে আগে ব্যাট করে আফগানিস্তানকে খুব একটা বড় সংগ্রহ দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
তবে ১২৭ রানের মামুলি পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশ বোলিংয়ে শুরুটা করেছিল দুর্দান্ত। তৃতীয় ওভারে রহমতউল্লাহ গুরবাজের সহজ ক্যাচ ছাড়লেও বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন অধিনায়ক সাকিব। পঞ্চম ওভারে গুরবাজকে মুশফিকুরের স্ট্যাম্পিংয়ে ফাঁদে ফেলে টাইগারদের প্রথম সফলতা এনে দেন সাকিব। তাকে যোগ্য সহায়তা দেন দলের অন্য দুই স্পিনার শেখ মেহেদি ও মোসাদ্দেক হোসেন। এই তিনজনের টাইট বোলিংয়ে রান তুলতে পারছিল না আফগানিস্তান। অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি যখন ফেরেন, ৪২ বলে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৬৬ রান। ম্যাচে তখন ফেভারিট ছিল বাংলাদেশই। তবে চিত্রটা বদলে দিলেন দুই জাদরান- নাজিবুল্লাহ ও ইব্রাহিম। বিশেষ করে নাজিবুল্লাহ। মাত্র ১৭ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁর জুটি অবিচ্ছিন্ন ছিল ৩৩ বলে ৬৯ রানে। মোস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারে ১৭ রান করে ম্যাচের মোর ঘুরিয়ে দেন এই দুই ব্যাটার। সাইফুদ্দিনের করা ১৮তম ওভারে দুটি করে চার-ছক্কায় এরা করেন ২২ রান। মোসাদ্দেকের করা ১৯ত ওভারের তৃতীয় বলে বিশাল ছক্কা হাকিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সাড়েন নাজিবুল্লাহ জাদরান। সাকিব, সাইফুদ্দিন ও মোসাদ্দেক নিয়েছেন একটি করে উইকেট। এর আগে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে টস ভাগ্য সহায় ছিল টাইগারদের।
প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন শেষ সময়ে দলে যুক্ত হওয়া নাঈম শেখ। দ্বিতীয় ওভারে অফ স্পিনার মুজিব উর রহমানকে আনেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নাবি। প্রথম ওভারেই সাফল্য মুজিবের। নাঈম শেখকে পরিষ্কার বোল্ড করে দেন তিনি। ৮ বলে ৬ করে সাজ ঘরে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার। ওয়ানডেতে যতই আত্মবিশ্বাসী মনে হোক, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেন এনামুল হক বিজয় একদমই মানিয়ে নিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এই ওপেনার নিয়মিতই ব্যর্থ হচ্ছেন টি-টোয়েন্টিতে। এশিয়া কাপেও তার ব্যতিক্রম হলো না। ১৪ বলে মাত্র ৫ রান করে ফিরেন সাজ ঘরে। মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণিতে ক্রস খেলতে গিয়ে লাইন পুরোপুরি মিস করেন বিজয়। নাঈম শেখ, এনামুল হক বিজয়ের পর অপরিণামদর্শী শট খেলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক সাকিবও (৯ বলে ১১)। তিনটি উইকেটই নেন আফগান অফস্পিনার মুজিব উর রহমান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। সেখানেই থামেনি উইকেট পতনের মিছিল। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে রশিদ খান বল হাতে নিয়ে যোগ দেন উইকেট শিকারের উৎসবে। এবার এলবিডব্লিউ মুশফিকুর রহীম (১)। একদম অপরিপক্কতার পরিচয়দেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। ২৮ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে এরপর টেনে তোলার দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর তরুণ আফিফ হোসেন। পঞ্চম উইকেটে তারা দেখে শুনে খেলে যোগ করেন ২৫ বলে ২৫ রান। একাদশতম ওভারে এসে এই জুটিটি ভাঙেন রশিদ খান।
আফগান লেগস্পিনারের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আফিফ (১৫ বলে ১২)। ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। দলের চরম বিপদের মুখে দুটি জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। প্রথমে আফিফ হোসেনকে নিয়ে ২৫ বলে ২৫, পরে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে ৩১ বলে ৩৬ রান যোগ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। অবশেষে ইনিংসের ১৬তম ওভারে রশিদ খানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের দারুণ ডাইভিং ক্যাচ হন তিনি। ২৭ বলে ১ বাউন্ডারিতে মাহমুদুল্লাহ করেন ২৫ রান। মোসাদ্দেক উইকেটে আসার পর ঠিক টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাই করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ফিফটিটা পাননি এবং সেটা নিজের ভুলেই। আফগান মিডিয়াম পেসার ওমরজাইয়ের করা শেষ ওভারে তিন বল খেলে মাত্র ২ রান নিতে পারেন মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৮ রানে। ৩১ বলে ৪ চার ও এক ছয়ে এই রান করেন মোসাদ্দেক। মূলত তার ব্যাটিংয়ে সম্মানজনক পুঁজি পায় বাংলাদেশ। আফগান মিডিয়াম পেসার ওমরজাইয়ের করা শেষ ওভারে তিন বল খেলে মাত্র ২ রান নিতে পারেন মোসাদ্দেক। আফগানিস্তানের বোলারদের মধ্যে ৩টি করে উইকেট নেন মুজিব উর রহমান আর রশিদ খান।