উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে এখন হাজার চড়ুইয়ের মিলনমেলা চোখে পড়ে । সন্ধ্যার আকাশে তাদের বেপরোয়া ছোটাছুটি আর কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের পথ প্রান্তর। বেলা ডোবার আগে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে চড়ুই। এমন দৃশ্য মুগ্ধ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। তারা বলছেন, পাখিরা নির্ভয়ে উড়বে, ছোঁবে আকাশ। শহুরে সন্ধ্যায় যোগ করবে অনন্য মাত্রা।
বেলা যখন পশ্চিমে নুইয়ে পড়ে, শান্ত শহরে ক্লান্ত পথিক যখন খোঁজে কিঞ্চিৎ অবসর, যখন সান্ধ্যকালীন প্রার্থনার আয়োজনে মাতে চারপাশ, ঠিক তখনই শুরু হয় চড়ইয়ের আনাগোনা। একটি দু’টি করে হাজারও চড়ুই চষে বেড়ায় শহরের এ পাড়া থেকে ও পাড়া। কলকাকলিতে মুখর করে নগরীর পরিবেশ।
হেমন্তের পাকা ধানের ঘ্রাণ আর হালকা শীতের আমেজে সীমান্ত জনপদ পঞ্চগড় জেলা শহরে বাড়ে চড়ুইয়ের আনাগোনা। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায় ওরা। উড়তে উড়তে ক্লান্ত হলে কিছুটা সময় বিশ্রাম নেয় শহরের বৈদ্যুতিক তার বা দোকানের চালায়। একসাথে তাদের ছুটে বেড়ানোর দৃশ্য মন ছুঁয়ে দেয় পাখিপ্রেমিদের।
সাথানীয় একজন বলেন, ‘প্রতিদিন আসর নামাজের পর আমাদের মসজিদের ওপরে এই তারে এসে বসে। হাজার হাজার পাখি যখন একসাথে আকাশে উড়ে বেড়ায় তখন দেখতে ভালো লাগে।’
অন্য একজন স্থানীয় বলেন, ‘প্রতিদিন পাখি এসে উড়ে বেড়ায়, ওদের দেখে অনেক আনন্দ লাগে। পাশে এসে যখন বসে তখন ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতেই মন চায়।’
শহরের দোকানি থেকে শুরু করে সবাই উপভোগ করে চড়ুইয়ের এই খেলা। কেউ তাদের বিরক্ত করে না। নির্ভয়ে শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় চড়াইয়ের দল। মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট উড়াউড়ির পর নীড়ে ফিরে যায় তারা।
একজন পাখিপ্রেমী বলেন, ‘এই যে কিচিরমিচির, এই যে মুগ্ধময় একটা সৌন্দর্য তা বাজারের সব মানুষ আমরা অবলোকন দৃষ্টিতে উপভোগ করি।’
পাখিদের আবাসস্থল দিন দিন কমে আসছে। উজাড় হচ্ছে বনভূমি। তাই হারিয়ে যাচ্ছে দেশিয় প্রজাতির পাখিও। কবিদের গান ও কবিতায় যে পাখিরা জায়গা করে নিয়েছে সেই চড়ুইসহ দেশিয় পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়ে তোলা সময়ের দাবি বলে মনে করেন প্রকৃতিপ্রেমিরা।
পঞ্চগড় উদীচীর সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুতের তারে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর চড়ুই পাখি দেখতে পারছি। এতে করে বুঝা যায় এই পাখিগুলো এখনও আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের সঠিক আশ্রয়ের অভাবে, সঠিক আবাসনের অভাবে এবং পরিবেশগত বিরূপতার অভাবে তারা বছরের সবসময় আমাদের চোখে পড়ে না। এজন্য পাখি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সলেরই দায়দায়িত্ব আছে, সকলেরই আরও অধিক মনোযোগী হওয়া দরকার আছে।’