ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এবার বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছেন হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডিএনসিসি। নিয়ম মেনে আবেদন করলে দেয়া হবে লাইসেন্স। এ বিষয়ে সায় দিয়েছেন ডিএনসিসি’র মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও। সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে প্রতিনিয়ত হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা। হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করলেও নিয়ম মেনে চলতে চাই। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পেলে হয়রানি আর চাঁদাবাজদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা।
তাদের এই কাজে লিড দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। দৈনিক হারে চাঁদা তোলেন তারা। এতে হকারদের আয়ের চাইতে অনেক সময় ব্যয় বেড়ে যায়। এ ছাড়া তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। ফুটপাথে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে ভেঙে দিলেও ফের তা দখলে নেয় হকাররা। ফলে সিটি করপোরেশন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। এতে একদিকে বাড়বে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব, অন্যদিকে রোধ হবে চাঁদাবাজি।
রাজধানীর কাওরান বাজার পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে ফুটপাথে ব্যবসা করছেন অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। তারা বলেন, ফুটপাথে ব্যবসা করে যা লাভ হয়, তার ওপর ভাগ বসান অনেকেই। নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজন প্রতিনিয়ত চাঁদা নেন। চাঁদার টাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হলে কয়েকদিন পর পর উচ্ছেদ করেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ভয় থাকে। কখন কাকে তাড়িয়ে দেয়। ফলে বেচাবিক্রি না থাকলেও তাদের চাঁদার টাকা প্রতিদিন বাসা থেকে নিয়ে আসতে হয়।
তারা বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ব্যবসা করার অনুমতি চেয়ে আসছি। শুনেছি তারা আমাদের তালিকা করছেন। আমরা চাই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাঁদা না দিয়ে সিটি করপোরেশনে রাজস্ব দিবো। এতে আমরা বৈধভাবে ব্যবসা করতে পারবো। লাইসেন্স নিয়ে কোনো বাণিজ্য না হলে হকার ও ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের কোনো ভোগান্তি হবে না।
সূত্রে আরো জানা যায়, হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কোন্ ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স দেয়া হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঈদের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ডিএনসিসি। নির্ধারিত স্থানেই হকাররা বসে ব্যবসা করবেন। এক্ষেত্রে হকারদের কাছ থেকে লাইন্সেস ফি ছাড়া অন্য কোনো ট্যাক্স নেয়া হবে কিনা সে বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি। তবে অফিস চলাকালীন ও ভিআইপি সড়কে হকারদের বসতে দেয়া হবে না। এতে সড়কে যানজট কমে আসবে।
বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, আমাদের অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা স্বাধীনতার সময় থেকে ফুটপাথে ব্যবসা করে আসছেন। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ হকারের পুনর্বাসন ও তাদের লাইসেন্স দেয়া নিয়ে দাবি জানিয়ে আসছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে লাইসেন্স কীভাবে দেয়া হবে, কোন্ ক্যাটাগরিতে দেখা হবে সেটা নিয়ে সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া লাইসেন্স দেয়া নিয়ে যেন কোনো দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিজস্ব লোক, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা লাইসেন্স পেলে হকারদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না।
এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, ডিএনসিসি এলাকার ফুটপাথের ব্যবসায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের লাইসেন্স দেয়ার পরিকল্পনা আছে। সিটি করপোরেশনের রাস্তায় হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে অনেকেই। যাতে তাদের চাঁদা দিতে না হয়, সে লক্ষ্যে কিছু রাস্তা হকারদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিবো। সিটি করপোরেশন থেকে তাদেরকে লাইসেন্স দেয়া হবে। সেখানে তারা ব্যবসা করতে পারবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সেলিম রেজা বলেন, বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাথে ব্যবসা করা হকারদের পুনর্বাসনের জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডিএনসিসি। এক এক করে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা চাই হকারদের একটা পরিচয়পত্র থাকুক।