হংকংয়ে চীনের আরোপিত বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে প্রথমবার চার অপ্রাপ্ত বয়স্ককে শাস্তিস্বরূপ একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। চারজনই হংকং থেকে চীনের সরকার উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিল।
তাদের বিরুদ্ধে ‘বিপর্যয় উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয়। তিন বছর আগে হংকংয়ে গণতন্ত্রকামীদের কয়েক দফা সহিংস বিক্ষোভের পর ওই ভূখণ্ডে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে বেইজিং। এই আইনের অধীনেই ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং ১৭ বছর বয়সী চার কিশোরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
চারজনই ‘রিটার্নিং ভ্যালিয়েন্ট’ নামের স্বল্প পরিচিত স্বাধীনতাপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য। গত বছর চীনের বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহে ভূমিকা রেখেছে তারা।
আজ শনিবার রায় ঘোষণার সময় বিচারক কোক ওয়াই-কিন বলেন, আসামিদের বার্তা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হিংস্র করে তুলতে পারে, যদিও উসকানির সরাসরি প্রমাণ মেলেনি বলে স্বীকার করেছেন বিচারক। তিনি বলেন, একজনও যদি তাদের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়, তবে হংকংয়ের স্থিতিশীলতা এবং বাসিন্দারের নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চারজনই গত মাসে ১৯ বছর বয়সী আরেক আসামি কোক মান-হেইয়ের সঙ্গে নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে। পাঁচজনকে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে তিন বছর পর্যন্ত আটক রাখার দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণকেন্দ্র পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেখানে শাস্তির বিকল্প হিসেবে ১৪ থেকে ২০ বছর বয়সী টিনএজারদের রাখা হয়।
আগের শুনানিতে সরকারি আইনজীবী স্টেলা লো বলেন, আসামিরা ব্যস্ত রেলস্টেশনের বাইরে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে, সংবাদ সম্মেলন করেছে এবং অনলাইনেও সম্প্রচার করেছে।
বিবাদীরা আসামিদের সমর্থনে ফরাসি বিপ্লব এবং ইউক্রেনের গণতন্ত্রীকরণের জন্য গত এক দশকে সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেছে।
রিটার্নিং ভ্যালিয়েন্ট তাদের প্রচারের ফ্লায়ারে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মাও জেদংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছিল ‘বিপ্লব কোনো নৈশভোজ নয়’; বরং বিপ্লব হলো ‘সহিংসতার মাধ্যমে এক শ্রেণি আরেক শ্রেণিকে উৎখাত করা।’
যুক্তরাজ্য ১৯৯৭ সালে চীনের হাতে হংকংয়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করে। ওই সময় যুক্তরাজ্য ও চীনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে বলা হয়, কমপক্ষে ৫০ বছর হংকং স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং এ সময়ের মধ্যে ওই ভূখণ্ডে চীন নিজেদের কোনো আইন প্রয়োগ করতে পারবে না। চুক্তি সত্ত্বেও মাত্র ২৩ বছরের মাথায় জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলে হংকংয়ে নিজেদের তৈরি আইন বলবৎ করে চীন। এ নিয়ে হংকংয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হলেও এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় বইলেও তাতে কান দেয়নি চীন। ওই আইনের অধীনে ধরপাকড় ও দণ্ড প্রদান চলছেই। সর্বশেষ পাঁচ টিনএজারকে এই আইনের আওতায় শাস্তি দেওয়া হলো। সূত্র: এএফপি