প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার নয়াদিল্লি থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন। ঢাকায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতার জন্য শেখ হাসিনাকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখলে দেশের উন্নতি হয়, আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি। আমি মনে করি, বিশ্বের জন্য এটা একটা দৃষ্টান্ত।’ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরো শক্তিশালী হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে দুই দেশের তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
এগুলো হলো আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ ও মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট। এ সময় দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকাকালে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ও এ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক অব্যাহতভাবে নতুন উচ্চতায় উঠছে।
গত ৯ বছরে আমরা একসঙ্গে যে পরিমাণ কাজ করেছি তা আগের কয়েক দশকের চেয়েও বেশি।’
মোদি বলেন, গত ৯ বছরে স্থল সীমান্ত চুক্তি, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের সমাধান, ঢাকা, শিলং, আগরতলা, গুয়াহাটি ও কলকাতার মধ্যে তিনটি নতুন বাস পরিষেবা, তিনটি নতুন ট্রেন পরিষেবা, পার্সেল ও কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা, গঙ্গা বিলাস ক্রুজের মতো যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৯ বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে তিন গুণ। তিনি আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগের উদ্বোধনকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রথম রেল সংযোগ।
এর মাধ্যমে ভারতের ওই রাজ্যগুলো বাংলাদেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দৃঢ় বন্ধনের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের উন্নয়ন সহায়তায় বাস্তবায়িত তিনটি প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার বহিঃপ্রকাশ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশাবাদী, সামনের দিনগুলোতে আমাদের যৌথ সহযোগিতার দৃষ্টান্তস্বরূপ আরো এমন অনেক সাফল্যের উদাহরণ তৈরি হবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি, যার মধ্যে রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজীকরণসহ আরো অনেক কিছু।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে আমাদের অর্জন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সে সময় তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এই দুটি খাতে বাংলাদেশের অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো এবং উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের জনগণ ও তাঁর তরফ থেকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় করতে আপনার আন্তরিকতার জন্যও আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। চলচ্চিত্রটি বর্তমানে ভারতসহ বাংলাদেশের সব প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। নির্মাণসংশ্লিষ্ট সব কলাকুশলীসহ সবাইকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের জনগণ যাতে ব্যবহার করতে পারে সে জন্য তাঁর সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গত প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন ও লক্ষ্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।” সে জন্যই তাঁর সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দুই দেশের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বাস্তব ফলাফল অর্জন করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের অন্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ সহজীকরণ প্রভৃতি।’
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি আসন্ন দীপাবলি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতের জনগণকে তাঁর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান।