সেই একই চিত্রনাট্য মেনেই শেষ হলো দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি; টস জিতে জিম্বাবুয়েকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানো থেকে শুরু করে ইনিংসের প্রথম ধাপে সফরকারীদের ব্যাটিং ধস, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বোলারদের জন্য কিছু লড়াইয়ের পুঁজি এবং রান তাড়ায় শুরুতে স্বাগতিক ব্যাটারদের জড়তা। তবু শেষটায় ছয় উইকেটে বাংলাদেশের সহজ জয়।
এর মধ্যে ‘ধারাবাহিক’ বৃষ্টির বাধার কথা তো বলা হয়নি। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুবার বৃষ্টির বাধার মুখে পড়ে ম্যাচ।
যদিও নির্বিঘ্নেই শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বৃষ্টির আসা-যাওয়া চলে বাংলাদেশের ইনিংসে। পার্থক্যটা হচ্ছে, দ্বিতীয় ম্যাচে সেটা কয়েকবার ভুগিয়েছে। এই বৃষ্টি আসে তো এই উধাও! এর মাঝেই জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৩৯ রানের লক্ষ্য ৯ বল হাতে রেখে তাড়া করে বাংলাদেশ।
দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটে ভালো শুরুই পায় বাংলাদেশ। দুজনের ৪১ রানের জুটি ভাঙে তানজিদের বিদায়ে। টাডিওয়ানাশে মারুমানির বলে ব্রায়ান বেনেটের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তাঁর ১৮ রানের ইনিংস। আরেক ওপেনার লিটন দাসের ব্যাটে রান দেখা গেছে বটে।
তবে ২৫ বলে ২৩ রানের ইনিংসটা তাঁকে ঠিক কতটা খুশি করতে পেরেছে, প্রশ্নসাপেক্ষ। আউট হয়ে ফেরার সময় গ্যালারি থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ ধ্বনিও শুনলেন লিটন। লিটনকে ঘিরে আলোচনায় কিছুটা আড়ালেই চলে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। খুব একটা ডানা মেলতে পারছেন না তিনিও। শেষ ১২ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে একটিমাত্র ফিফটি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২১ রান, যেটি করতে ২৪ বল খেলেন তিনি। কাল আউট হন ১৬ রান করে। ভালো খেলতে খেলতেই লুক জঙ্গিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে নামা রায়ান বার্লের হাতে।
সুবিধা করতে পারেননি জাকের আলি অনিকও। আগের ম্যাচে ব্যাটিং না পাওয়া ব্যাটার এদিন ব্যাটিং অর্ডারের ওপরে উঠে আসেন। বাঁহাতি পেসার রিচার্ড এনগারাভার বলে তিনি আউট হন ১২ রানে। ৯৩ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংসের বাকি গল্পটা তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানের জুটিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তাওহিদ ৩৭ ও মাহমুদ ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
বোলারদের লড়াইয়ের এই পুঁজিটা জিম্বাবুয়ে পেয়েছিল ব্রায়ান বেনেট ও অভিষিক্ত জোনাথন ক্যাম্পবেলের ব্যাটে। এর মধ্যে দ্বিতীয় জন জিম্বাবুয়ের সোনালি যুগের সারথি অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে। বাবার মতো ছেলেও বাঁহাতি ব্যাটার। বাঁ হাতেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দর্শকদের বিনোদিত করেছেন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে। তাঁর ২৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি সাজানো চারটি চার ও তিন ছক্কায়। সঙ্গী বেনেটের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৪৪ রান। তাঁর ইনিংসে রয়েছে তিন ছক্কা ও দুটি চার। প্রথম ম্যাচে ৪১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে বসা দলকে অষ্টম উইকেটে ৭৯ যোগ করে টেনে তুলেছিলেন ক্লাইভ ম্যাডানডে এবং ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। সেদিন সফরকারীদের ইনিংস থামে ১২৪ রানে।
রবিবার ৪২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। সেখান থেকে ৭৩ রানের জুটিতে এবার জিম্বাবুয়ের ত্রাণকর্তা বেনেট ও জোনাথন। জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে তোলে আগের ম্যাচের চেয়ে ১৪ রান বেশি। এবার অবশ্য তাদের অল আউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ১৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা তাসকিন আহমেদ এদিনও ১৮ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। ওপেনার মারুমানিকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে সফরকারীদের ধসের সূচনাও এই পেসারের হাতেই। ধুঁকতে ধুঁকতে ৩০ বলে ১৭ রান করা আরেক ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষকে আরো চেপে ধরেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
এরপর একই ওভারে তিন বলের মধ্যে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা (৩) ও ম্যাডানডেকে (০) তুলে নেন লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের বলে ক্রেইগ আরভিনের বিদায়ে জিম্বাবুয়ের বিপদ আরো ঘনীভূত হয়। সেখান থেকে পুরনো চিত্রনাট্য মেনে বেনেট ও জোনাথন জিম্বাবুয়েকে উদ্ধার করলেও ফল সেই একই।