দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ তিন শুল্ক্ক বন্দর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী। ভারতের মেঘালয় থেকে এই তিন বন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি করেন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এই কয়লা যায় দক্ষিণবঙ্গসহ সারাদেশে। পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন এখানকার আমদানিকারকরা। সেতু চালু হলে কমবে পরিবহন খরচ, চাহিদা বাড়বে এই কয়লার। বর্তমানে দক্ষিণবঙ্গের কয়লা ব্যবসায়ী ও ইটভাটা মালিকরা যে পরিমাণ কয়লা এখান থেকে নিচ্ছেন, সে হিসাবেই পরিবহন খরচ বাঁচবে বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সারাদেশে চাহিদা রয়েছে মেঘালয়ের কয়লার। আমদানি করা এই কয়লা তাহিরপুর সীমান্ত থেকে বাল্ক্কহেড ও কার্গোয় যায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুমিল্লার দাউদকান্দি ও ঢাকার গাবতলীতে। পরে সেখান থেকে ট্রাকে যায় দক্ষিণবঙ্গে। এতে বাড়ে পরিবহন খরচ, সময় লাগে বেশি। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অবস্থা বদলে যাবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জাহের আলী বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীর কয়লা আমদানিকারকদের স্বস্তি বেড়েছে। এখন ভৈরব, দাউদকান্দি ও গাবতলী থেকে পাঁচ-ছয় দিনে কয়লার ট্রাক খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশালসহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছায়। এ কারণে পরিবহন খরচ বেশি হয়। ক্রেতা বা ইটভাটার মালিকরাও এখানে আসতে চান না। পদ্মা সেতু হওয়ায় পথে সময় কমে যাবে। এক-দুই দিনে ট্রাকে কয়লা পৌঁছে যাবে ইটভাটা বা ব্যবসায়ীর ডিপোতে। তিনি জানান, গত বছর বরিশালে এক হাজার টনের মতো কয়লা বিক্রি করেছেন। ক্রেতার পরিবহন খরচ লেগেছে ১২ লাখ টাকার মতো। পদ্মা সেতু চালু হলে সেই ব্যয় অর্ধেক কমে ছয় লাখ টাকায় নেমে আসবে।
সমিতির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীর কয়লার চাহিদা সারাদেশে থাকলেও পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় নিতে চান না আগ্রহীরা। এখন আর সেই বাধা থাকল না। আমাদের কয়লার বাজার আরও বেড়ে যাবে।
তাহিরপুরের আমদানিকারক খসরুল আলম বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঢাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের কয়লা কেনেন। পরে তাঁরাই দক্ষিণবঙ্গে বিক্রি করেন। কিন্তু পদ্মা নদী পার হয়ে ট্রাক যাওয়ার সময় কোনো মৌসুমে কুয়াশায় ফেরি চলাচলে বিলম্ব হয়, ট্রাক আটকে থাকে; আবার কখনও বা বর্ষায় প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, তখনও ট্রাক আটকে পড়ে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীর ৫০০ আমদানিকারকের মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ জন দক্ষিণবঙ্গে কয়লা বিক্রি করেন। কমপক্ষে দুই লাখ টন কয়লা এখান থেকে বছরে দক্ষিণবঙ্গে যায়, যার দাম প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। প্রতি টন কয়লার পরিবহন খরচ কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ টাকা। সে হিসাবে বছরে দক্ষিণবঙ্গে কয়লা পরিবহনে খরচ হয় ২৪ কোটি টাকা। এই খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে, অর্থাৎ বছরে কয়লা পরিবহনে ১২ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া এই বন্দরে দক্ষিণবঙ্গের ক্রেতাও বাড়বে। তিনি তাহিরপুর সীমান্তের এই তিন বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ ও সহজ করার জন্য সীমান্তের পাটলাই নদী দ্রুত খননেরও দাবি জানান।