সিলেটে শহীদ মিনারে ৫২ ভাষায় ‘মা’

‘মা : অবাক আলোর লিপি’- নামে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘লিডিং ইউনিভার্সিটি’ ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারে স্থান পেয়েছে বাংলাসহ বিশ্বের ৫২ ভাষায় লেখা ‘মা’। রয়েছে মাকে নিয়ে লেখা কালজয়ী একাধিক কবিতার চরণও। রয়েছে কবির সুমনের বিখ্যাত গানের- ‘আমি চাই সাঁওতাল তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে’ -লাইনটিও।

এই শহীদ মিনারের স্থপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান রাজন দাস। তিনি বলেন, ‘মা এবং মাতৃভাষা এই শহীদ মিনারের প্রধান উপজীব্য বিষয়। পৃথিবীতে মাত্র দু’-চারটি ভাষা ছাড়া সব ভাষাতে ‘মা’ শব্দটির শুরু ‘ম ধরণের’ বর্ণ দিয়ে। তাই মাতৃভাষার

আন্তর্জাতিকতাবোধের জায়গা থেকে বাংলাভাষা ছাড়াও আমাদের দেশে যেসব নৃগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের ভাষাসহ ৫২টি ভাষায় লেখা ‘মা’ শব্দটি এই শহীদ মিনারে বসানো হয়েছে।’

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজারে লিডিং ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। এর প্রধান ফটকের পাশে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এই শহীদ মিনার। ১৫ শতক জায়গা নিয়ে ২০১৮ সালে শহীদ মিনার নির্মাণকাজ শুরু হয়; শেষ হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। ৩৮ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট চওড়া শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এই শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় তিনি এর স্থাপত্যশৈলী দেখে অভিভূত হন। ধন্যবাদ জানান স্থপতিকে।

এই শহীদ মিনারে বাংলা ছাড়াও চাকমা, মারমা, ম্রো, মগ, ত্রিপুরা, রাখাইন, মনিপুরী, সিলেটি নাগরী, অহমিয়া, মিজো, পাত্র, খাসিয়া, সাঁওতালদের ভাষায় লেখা ‘মা’ শব্দটি বসানো রয়েছে। অন্যান্য ভাষার মধ্যে সংস্কৃত, আরবী, উর্দু, ফার্সি, পশতু, গ্রিক, রোমান, হায়ারোগ্লাফিক, রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষার ‘মা’ও আছে এখানে। একইসঙ্গে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, ডাচ, তামিল, গুজরাটি, বার্মিজ, জার্মান ভাষায় লেখা ‘মা’ও রয়েছে। রয়েছে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় মায়ের উচ্চারণ ‘মাইজিও’ও।

স্থপতি রাজন দাস বলেন, ‘পৃথিবীতে সাত হাজার ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সেই জায়গা থেকে চিন্তা করলে আমাদের দেশেও অনেক ভাষা ঝুঁকির মধ্যে। বড় ভাষা ছোট ভাষাকে খেয়ে ফেলছে। সব ভাষা বেঁচে থাকুক সেই অঙ্গীকারের চিন্তা আছে এই শহীদ মিনারে। এটি সূচনা মাত্র। আমরা চাই, সব ভাষা স্থান পাক শহীদ মিনারে। সব মায়ের বুলি স্থান পাক।’

রাজন দাস সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এবং মদনমোহন কলেজের রিকাবীবাজার ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের স্থপতিও। তার এই দুটি কাজও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

Comments (0)
Add Comment