সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে আবারো জয়ী হয়েছেন বাশার আল আসাদ। তবে তার বিরোধীরা ‘প্রহসন’ আখ্যায়িত করে এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচনের যে ফল ঘোষণা করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে বাশার আল আসাদ ৯৫.১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর নির্বাচনে ভোটদানের হার হল ৭৮.৬ শতাংশ।
বাশার আল আসাদের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ সালৌম আব্দুল্লাহ ও মাহমুদ আহমেদ মারি পেয়েছেন যথাক্রমে ১.৫ শতাংশ ও ৩.৩ শতাংশ ভোট। খবর বিবিসির
প্রায় দশ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এখন বিপর্যস্ত। ২০১১ সালে বাশার আল আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সরকারি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এ লড়াইয়ে প্রায় তিন লাখ ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদেশে শরণার্থী শিবিরে আছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ।
এবারের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মূলত সরকারি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এবং বিদেশে সিরীয় কিছু দূতাবাসে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশে।
সিরিয়ার নির্বাসিত বিরোধী নেতারা এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সিরিয়ান নেগোসিয়েশন কমিশনের মুখপাত্র ইয়াহইয়া আল আরিদি একে সিরীয় জনগণের অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় এটি সরকারি একটি সিদ্ধান্ত। এটা স্বৈরতন্ত্রকেই চালু রাখা।’
এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে এই নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের আগে দেওয়া ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান ছাড়া এটি অবাধও নয়, সুষ্ঠুও নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সিভিল সোসাইটি সংগঠন ও বিরোধী দলসহ সিরীয় জনগণের কণ্ঠকে সমর্থন করি, যারা এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবৈধ আখ্যায়িত করেছেন।’
৫৫ বছর বয়সী বাশার আল আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা হাফিজ আল আসাদ প্রায় পঁচিশ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন। তারপর দায়িত্ব নেন তিনি।
দেশজুড়ে লড়াইয়ের মধ্যে ২০১৪ সালে সিরিয়ায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা বিরোধীরা বর্জন করেছিল। এরপর থেকেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বাশার আল আসাদের অনুকূলে যেতে থাকে এবং রাশিয়ার বিমান হামলা আর ইরানের সামরিক সহযোগিতায় বড় শহরগুলোতে সরকারি বাহিনী আবারো কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হয়।
তবে দেশটির বড় একটি অংশ এখনো বিদ্রোহী, জিহাদি ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এবং সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান এখনো দেখা যাচ্ছে না।