বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়াজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দখলদার দেশটি ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়ায় ৪৮০টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে সিরীয় নৌবহর, ধ্বংস হয়েছে ১৫টি জাহাজ। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছে, সোমবার রাতে আল-বাইদা ও লাতাকিয়া বন্দরে তারা হামলা করেছে, যেখানে সিরিয়ার নৌবাহিনীর ১৫টি জাহাজ নোঙ্গর করা ছিল।
লাতাকিয়া বন্দরে হামলার ভিডিও ফুটেজ বিবিসি ভেরিফাই করে দেখেছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বন্দরের একাংশ এবং জাহাজগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে যে তাদের যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়াজুড়ে সাড়ে তিনশোর বেশি বিমান হামলা করেছে। অন্যদিকে এর স্থলবাহিনী সিরিয়া ও দখলীকৃত গোলান মালভূমির মধ্যবর্তী বাফার জোনের সাময়িক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলেছে, রোববার সিরিয়ান বিদ্রোহীদের হাত আসাদ সরকারের উৎখাতের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩১০টি হামলার তথ্য রেকর্ড করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয বলেছেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি কৌশলগত যেসব হুমকি আছে সেগুলো ধ্বংসই তাদের লক্ষ্য’। তিনি সিরিয়ার নৌবহর ধ্বংস করাকে ‘বিশাল সাফল্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আইডিএফ অবশ্য আরও বিস্তৃত হামলার তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে এয়ারফিল্ড, সামরিক যানবাহন, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র এবং অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর কিছু সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। আর কিছু হোমস, তারতাস ও পালমিরায়।
এর বাইরে গোডাউন, গোলাবারুদের মজুত এবং কয়েক ডজন সাগর থেকে সাগরে উৎক্ষেপণযোগ্যও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাও ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল। ইসরায়েলের দাবি ‘এগুলো যাতে উগ্রপন্থীদের হাতে না যায়’ সেজন্যই তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
এক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাতকারী বিদ্রোহী গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএসকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তারা যদি ‘ইরানকে সিরিয়ায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে’ তাহলে ‘ইসরায়েলকে শক্তি প্রয়োগ করেই জবাব’ দিতে হবে। এর আগে তিনি সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন।
এসওএইচআর এর প্রতিষ্ঠাতা রামি আব্দুর রহমান বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় ‘সিরিয়ার আর্মির সব সক্ষমতা’ ধ্বংস হচ্ছে। তার মতে ‘সিরিয়ার সার্বভৌমত্বও লঙ্ঘিত হয়েছে।’
অন্যদিকে আইডিএফ ইসরায়েলি অধিকৃত গোলান উপত্যকার সীমান্তে বাফার জোনের বাইরে তাদের সেনা অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছে। তারা স্বীকার করেছে যে সিরিয়ার ভূমিতে তাদের সেনারা প্রবেশ করেছে, তবে রাজধানী দামেস্ক অভিমুখে ট্যাংক যাওয়ার খবর ‘অসত্য’ বলে জানিয়েছে।
তাদের কিছু সেনা গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্তের ‘এরিয়া অফ সেপারেশন’সহ আর কিছু এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
আইডিএফ’র মুখপাত্র নাদাভ শশানি বলেন, যখন আমরা আরও কিছু এলাকার কথা বলছি তার মানে হলো আমরা এরিয়া অফ সেপারেশন বা বাফার জোন এলাকার কথা বলছি।