এই শীতে এক কাপ গরম চা বাড়িয়ে দিতে পারে শরীরের তাপমাত্রা। বর্ষায় ধূমায়িত চায়ের কথা তো অনেক আগেই সাহিত্যের অংশ হয়েছে। চাপ্রেমী বাঙালি নানা জাতের চায়ে রসনা তৃপ্ত করে আসছে। তবে চা উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর সঙ্গে টক্কর দিলেও মান নির্ধারণে সনাতনি পদ্ধতি অনুসরণের ফলে চূড়ান্ত লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়তে হয় বাংলাদেশকে।
এই সমস্যার সমাধানে চমৎকার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) একদল গবেষক। এ পদ্ধতিতে চায়ের দানার ছবি কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে দেশে প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হবে চায়ের নির্ভুল মান।
এতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চা মানের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
বর্তমানে চা উৎপাদনে বিশ্বে দশম স্থানে থাকা বাংলাদেশে ‘প্যানেল টেস্টিং’ পদ্ধতিতে চায়ের মান নির্ধারণ করা হয়। একদল বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ধরনের চায়ে চুমুক দিয়ে তার মান ও স্বাদ পরখ করেন। এরপর তাদের দেওয়া পয়েন্টের ভিত্তিতে চায়ের মান নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাদের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক সময় তা সঠিক হয় না। অন্যান্য দেশে প্যানেল টেস্টিংয়ের পাশাপাশি বিশেষ ধরনের চালুনি ব্যবহার করা হয় চায়ের মান নির্ধারণে। এতে চায়ের দানার আকারভেদে মান নির্ধারণ করা হয়। এ দুটি ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার হলেও সিকৃবির গবেষক দল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিতে ক্যামেরার সাহায্যে চায়ের দানার ছবি কম্পিউটারে বিশ্নেষণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে মান নির্ধারণ করা হবে।
দেশে চা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে চায়ের বিভিন্ন গ্রেডের (মান) পার্থক্যকরণের এলগরিদম উদ্ভাবন করেছেন সিকৃবির গবেষকরা। চায়ের মানের ওপর দাম নির্ধারিত হয় বলে উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে দেশে উৎপাদিত চায়ের বৈশ্বিক বাজারে প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। সনাতন পদ্ধতিতে চায়ের মান নির্ধারণ সময় ও শ্রমসাপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে দেশীয় চায়ের উৎপাদন বিশ্বে তিন শতাংশ চাহিদা পূরণ করলেও রপ্তানিতে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
‘চায়ের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত সিলেট অঞ্চলে অবস্থিত সিকৃবির গবেষক দল মান নির্ধারণে নির্ভুল পদ্ধতি উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাফল্য আসায় এখন তা বড় পরিসরে ব্যবহারের প্রক্রিয়া চলছে।
সিকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুনের নেতৃত্বে গবেষক দলে রয়েছেন সহকারী অধ্যাপক মো. তৌফিকুর রহমান, কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাসুদ আলম এবং একই বিভাগের শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা জেনিন ও তানজিনা রহমান মিম।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক রাশেদ আল মামুন বলেন, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটের একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে চায়ের বিভিন্ন টেপচারাল ফিচার এবং বাহ্যিক গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন চায়ের চারটি গ্রেডকে (মান) নির্ভুলভাবে বাছাই করা সম্ভব। এতে আধুনিক কম্পিউটার ভিশনে শুকনো চায়ের ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে; যাতে চায়ের দানার টেপচারাল ফিচার এবং বাহ্যিক গুণাগুণসহ অভ্যন্তরীণ ব্যাস সূক্ষ্ণভাবে নির্ণয় কর সম্ভব। তিনি বলেন, কম্পিউটার ভিশনে ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে একটি নতুন ধারণা। এটি চা উৎপাদন প্রযুক্তি ও রপ্তানি বাজারকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।