চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করে সরকার। দেশে যাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ ও নগদ টাকা রয়েছে তারা বাজেটে দেওয়া এ সুযোগে আগের তুলনায় বেশি সাড়া দিচ্ছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সারাদেশে ৭ হাজার ৬৫০ জন ব্যক্তি অপ্রদর্শিত সম্পদ ও নগদ টাকা ঘোষণা দিয়েছেন, যার আর্থিক মূল্য ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কর পেয়েছে। কালো টাকা সাদা করার এ পরিসংখ্যানকে এনবিআর করদাতাদের ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২০৫ জন করদাতা অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারাবাজারে বিনিয়োগ করে এনবিআরকে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কর দিয়েছেন। অর্থের উৎসের ব্যখ্যা ছাড়াই এবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি করদাতা বিনিয়োগ করা অঙ্কের ১০ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে তার অর্থের উৎস নিয়ে কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিনিয়োগে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগের ৩০ দিনের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে।
অন্যধারার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত সম্পত্তি ও নগদ টাকা করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ নিয়েছেন ৭ হাজার ৪৪৫ জন। এ থেকে এনবিআর ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কর পেয়েছে। সম্পত্তি বলতে জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি বোঝাবে। করদাতা আগের কর বছরগুলোতে এ ধরনের স্থাবর সম্পত্তি ও নগদ টাকা আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ না করলে এ বছর করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্টের জন্য এলাকাভেদে বর্গমিটার হিসেবে কর পরিশোধ করতে হবে। জমির ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ধার্য করা আছে। বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ২০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ধার্য করা হয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, এই দুই পন্থায় ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে প্রবেশ করেছে।
এনবিআরের তথ্য মতে, শুধু ডিসেম্বরে ৪ হাজার ২৯২ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। এনবিআর নভেম্বর পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার তথ্য প্রকাশের পর ডিসেম্বরে তুলনামূলক বেশি সাড়া পাওয়া গেছে। শুধু ডিসেম্বরেই ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে। এনবিআর বলেছে, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার, বিনিয়োগ বাড়ানো ও পুঁজিবাজার উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন করদাতারা।
এদিকে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর বিবরণী জমাও আগের বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। গত কর বছরে ২২ লাখ ১০ হাজার করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। এ বছর আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিপরীতে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর, যা আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যাদের টিআইএন রয়েছে, তাদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে মোট রিটার্ন দাখিল বেড়েছে।