‘সাদিক আমার দোকান ভেঙেছিল, আজ তার বাড়িই গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা’

বরিশাল থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুই নেতার পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে ভিড় করেছে উৎসুক জনতা। খুব ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পথচারীরা বাড়ি দুটি দেখতে আসেন। বাড়ি দুটি পুরোপুরি মিশিয়ে না দিলেও দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়িতে অবশিষ্ট থাকা মালামাল লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডস্থ সাদিক আব্দুল্লাহর সেরনিয়াবাত ভবন ও জীবনানন্দ দাশ সড়কের আমির হোসেন আমুর বাস ভবনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

আমির হোসেন আমুর বাড়ি দেখতে আসা শিউলী আক্তার বলেন, আমি আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছি ফ্যাসিবাদের আস্তানা দেখাতে। আমাদের রাজনৈতিক ডাকাতরা যেসব বাড়িতে থাকতো তারা পালিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো কেমন আছে তা দেখিয়ে মেয়েকে ইতিহাসের সাক্ষী করতে চাই।

সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা অভিভাবকের সঙ্গে আমির হোসেন আমুর ভেঙে ফেলা বাড়িটি দেখতে এসেছে। আগে বাড়িতে কড়া পাহারা থাকলেও বুধবার রাতে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার পর এবারই প্রথম ঢুকে দেখতে পেলাম। বাড়িটি খুবই বিলাসবহুল।

কবির হোসেন সিকদার বলেন, চিহ্ন হিসেবে নিয়ে যেতে কিছু খুঁজছিলাম। কিন্তু কিছুই পেলাম না। রাতেই সবাই সবকিছু নিয়ে গেছে। এখন শুধু বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে আছে।

বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, আমির হোসেন আমু এই বাড়িতে এসে থাকলেও মূলত বাড়িটি তার নয়। তার মামা জাহাঙ্গীর হোসেনের। কিন্তু তিনি এই বাড়িতে আসতেন। এজন্য বাড়িটি তার হিসেবে অনেকে জানেন। বাড়ি লুটপাট করে সবই নিয়ে গেছে। সবশেষ গতকাল রাতে বুলডোজার দিয়ে মূল গেট ভেঙে ঢুকে টিনশেড একটি ঘর আর সামনের ভবনের দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কক্ষে আগুন দিয়েছে।

আমির হোসেন আমুর এই বাড়িতে হামলায়  বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে কালীবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও উৎসুক জনতা ভিড় করে আছে এক সময়ে বরিশাল শহরের আওয়ামী এই নেতার বাড়িটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে।

সাইফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সাদিকের হাতে নির্যাতিত হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। মেয়র থাকাকালীন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়। আজকে সাদিকের বাসাও ছাত্রজনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তাই দেখতে এলাম।

আল আমিন নামে আরেকজন বলেন, বুধবার রাতে বাড়ি ভাঙতেও এসেছিলাম। সকালেও এসেছি ফ্যাসিবাদের আস্তানা দেখতে। মানুষ আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে। তার প্রমাণ বাড়িটি দেখতে এত মানুষ এসে ভিড় করেছে।

এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন কোনো বক্তব্য না দিলেও জানিয়েছেন, বর্তমানে বরিশাল নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

বুধবার রাত ৯টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ভাষণের প্রতিবাদে ফ্যাসিবাদের আস্তানা আখ্যা দিয়ে এসব বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

Comments (0)
Add Comment