নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানে যাওয়ার কারণে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিসা)-এর প্রধান ক্রিস ক্রেবসকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভোটে সততা নিয়ে ক্রিস ক্রেবস উচ্চ মাত্রায় ত্রুটিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বলে দাবি ট্রাম্পের। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ৩রা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেট জো বাইডেন। কিন্তু পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রমাণহীন বড় রকমের ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন তিনি। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই নির্বাচন ছিল ‘সবচেয়ে নিরাপদ’, সুষ্ঠু। নির্বাচনের ফল মেনে নিতে ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশসহ অনেক রিপাবলিকান।
কিন্তু ট্রাম্পের ওই একই কথা ‘নির্বাচনে আমিই জিতেছি’। এমন টুইটে ভরপুর তার টুইটার। তার প্রতি আনুগত্য নিয়ে সংশয় থাকায় গত সপ্তাহে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারকে বরখাস্ত করেছেন। এরপরই তিনি ক্রিস ক্রেবসকে বরখাস্ত করলেন। ওদিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে চাউর হয়ে গেছে যে, জানুয়ারিতে তিনি ক্ষমতা ছাড়ার আগে বরখাস্ত করতে পারেন সিআইএ পরিচালক গিনা হ্যাসপেল এবং এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে’কে। অন্য অনেকের মতো, ক্রিস ক্রেবস মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের টুইট থেকেই জানতে পারেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত করার পর মাইক্রোসফটের সাবেক এই নির্বাহীর মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায় নি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তপক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতি যখন উত্তপ্ত তখন প্রায় দু’বছর আগে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধানের পদে আসীন হন ক্রিস ক্রেবস। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে ভোটিং সিস্টেম নিয়ে রাজ্যের এবং স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি। কিন্তু নিজেদের ওয়েবসাইট রিউমার কন্ট্রোল নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় হোয়াইট হাউজে। এখানে নির্বাচনে ভুল তথ্যের বিষয় উন্মোচিত করা হয়। এসব ভুল তথ্য বেশিই ছড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে। বার্তা সংস্থা রিপোর্ট করেছে যে, ক্রিস ক্রেবসের একটি পোস্ট নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় হোয়াইট হাউজে। জাতীয় পর্যায়ে ভোট নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে তিনি ওই পোস্টে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্প শিবির থেকে ভোটে জালিয়াতির যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বা হচ্ছে, তেমন কোনো সিস্টেম বিদ্যমান নেই বলে দাবি করেছেন ক্রিস ক্রেবস ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তারা। তাকে বরখাস্ত করার অল্প আগে ক্রিস ক্রেবস একটি টুইট করেন। তাতে ট্রাম্পের অভিযোগকে টার্গেট করে করা হয়। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটিং মেশিন থেকে তার ভোটকে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু টুইটে এসব অভিযোগকে অপ্রমাণিত বলে উল্লেখ করেন ক্রিস ক্রেবস। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ ভোট হয়েছে বলে তিনি ও ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কয়েকজন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারা প্রেসিডেন্টের অপ্রমাণিত অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। হয়তো তারই মূল্য দিতে হয়েছে তাকে।